‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে চীন’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য চাপ প্রশমনের প্রচেষ্টা হিসেবে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে চীন। চীনের এই কৌশল ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য চাপ মোকাবিলায় দিল্লির সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভারত-কেন্দ্রিক মার্কিন ব্যবসায়িক একটি গ্রুপের প্রধান এই মন্তব্য করেছেন।

গত ৫ নভেম্বরের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা অন্যান্য পণ্যের ওপর ২০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন।

ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পার্টনারশিপ ফোরামের (ইউএসআইএসপিএফ) প্রেসিডেন্ট মুকেশ আঘি বলেন, আমরা আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের প্রাথমিক প্রভাব দেখতে পাচ্ছি; যা ভারতের সাথে হিসেব-নিকেশে চীনের ওপর চাপ তৈরি করেছে। যে কারণে সীমান্তে টহল দেওয়ার বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে। সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়েও রাজি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‘তারা ভারতে আসা চীনাদের আরও ভিসা দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগমন ইতোমধ্যে ভারত-চীনের সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।’’

গত মাসে বিতর্কিত পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর টহল দেওয়ার বিষয়ে চীনের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে ভারত। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে লাদাখে সামরিক অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে চিরবৈরী দুই প্রতিবেশীর এই পদক্ষেপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে।

ইউএসআইএসপিএফের প্রেসিডেন্ট মুকেশ আঘি বলেছেন, ‘‘ট্রাম্প আসছেন, চীনারা এটা হিসাব করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে উঠবে। তাহলে কেন এই চাপপূর্ণ সম্পর্কে একাধিক ফ্রন্ট থাকবে? তাই চীনারা ভাবছেন অন্তত ভারতের সাথে অংশীদারত্ব বা সম্পর্ক যতটা সহজ করা যায়, ততটাই ভালো।’’

তিনি বলেন, ‘‘নিরাপদ সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ভারত ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসন চীন থেকে পণ্যের উৎপাদন সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে।

আঘি বলেন, ‘‘কোম্পানিগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক আরোপের এই প্রচেষ্টা করছে। তবে এটি রাতারাতি ঘটবে না। উৎপাদন ব্যবস্থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নিয়ে যেতে প্রায় ৪০ বছর সময়ের দরকার হয়েছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ আমাদের যথেষ্ট দক্ষ জনবল নেই। তাই রূপান্তরে সময় লাগবে।’’

ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের প্রভাব সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এটি কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল নয়।

তিনি বলেন, ‘‘এটি দুই দেশের মাঝে ভূ-রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ওপর নির্ভরশীল। এটি অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। এটি বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। এটি মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল। ভূ-রাজনীতির দিকে তাকালে দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত জোটবদ্ধ রয়েছে; বিশেষ করে চীনের ক্ষেত্রে।’’

আঘি বলেন, আমরা জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি কোয়াডের ছত্রচ্ছায়ায় দুই দেশের মাঝে প্রচুর কর্মকাণ্ড ঘটতে দেখছি। দুই দেশের মাঝে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে; যা বাড়তে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয়রা ভারতেই প্রচুর মার্কিন প্রযুক্তি সামগ্রী উৎপাদন করছেন।

তিনি বলেন, ৫০ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশের জোগানদাতা; যারা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ। আপনি কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন তা দেখবে ট্রাম্প প্রশাসন। সেখানে ভারতকে এই বলে একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে যে, হ্যাঁ, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্লাস-১ কৌশলে সমর্থন জানাবো।

সূত্র: পিটিআই।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy