
বর্তমানে ভারতে মোট ৭৮০টি জেলা রয়েছে, যা দেশের ২৮টি রাজ্য এবং আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিস্তৃত। এর মধ্যে আদমশুমারি জেলা এবং প্রশাসনিক জেলা উভয়ই বিদ্যমান। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ভারতের প্রথম জেলাটি ১৭৭০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একসময় যা ছিল ডাকাতদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে কুখ্যাত, সেই অঞ্চলটিই আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় এক নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে।
পূর্ণিয়া: ভারতের প্রথম জেলা, জন্ম ১৭৭০ সালে
বিহারের পূর্ণিয়া জেলা হলো ভারতের প্রথম জেলা। ১৭৭০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে মুঘল শাসনের শেষের দিকে এটিকে একটি সামরিক সীমান্ত প্রদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ১৭৬৫ সালে ব্রিটিশরা পূর্ণিয়া জয় করে। সে সময় এই অঞ্চলটি ঘন বনাঞ্চলে আবৃত ছিল। পাঁচ বছর পর, সেখানে একটি বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয় এবং এরপরই ১৭৭০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সেই সময়ে, পূর্ণিয়া ডাকাত এবং দুষ্কৃতীদের আস্তানা হিসেবে কুখ্যাত ছিল। ব্রিটিশরা ক্ষমতা দখলের পর অপরাধী এবং সমাজবিরোধীদের নির্মূল করার অভিযান শুরু করলেও, স্থানীয়রা গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করতে সাহস পেত না। পূর্ণিয়া নামটি ‘পূর্ণা-অরণ্য’ থেকে এসেছে বলেও মনে করা হয়, যার অর্থ ‘সম্পূর্ণ জঙ্গল’।
স্বাধীনতার পর আমূল পরিবর্তন
স্বাধীনতার পর থেকে দেশের অন্যান্য অনেক অংশের মতো পূর্ণিয়াও আমূল পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। এটি এখন একটি স্মার্ট শহর, যেখানে স্কুল, কলেজ, পাবলিক পার্ক, হাসপাতাল, উন্নত রাস্তা এবং স্থানীয় পর্যটন প্রচারের জন্য সংস্কার করা ঐতিহাসিক স্থান-সহ সমস্ত আধুনিক সুযোগসুবিধা রয়েছে।
পূর্ণিয়া বিহারের ৩৮টি জেলার অন্যতম এবং এটি বিহারের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বাহক। এই জেলাতেই এর প্রশাসনিক কার্যালয় অবস্থিত। পূর্ণিয়া শহরের একটি বিশেষ ঐতিহ্য হলো, প্রতি স্বাধীনতা দিবসে ঠিক রাত ১২টা ৭ মিনিটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই রীতি ১৯৪৭ সাল থেকে আজও অব্যাহত রয়েছে।
পূর্ণিয়ার এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং বর্তমানের আধুনিক রূপান্তর, ভারতের জেলাগুলির বিবর্তন এবং উন্নয়নের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।