
নিউ ডেলhi, ২৫ অক্টোবর: বিশ্ববিখ্যাত উদ্যোক্তা এলন মাস্কের স্পেসএক্স (SpaceX) শীঘ্রই ভারতে স্টারলিঙ্ক (Starlink) স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করতে চলেছে। দেশের দুই শীর্ষ টেলিকম সংস্থা ভারতী এয়ারটেল (Bharti Airtel) এবং রিলায়েন্স জিও (Reliance Jio) ইতিমধ্যেই মাস্কের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতে গণ স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড পরিষেবা শুরু হতে যাচ্ছে, যা দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলেও উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেবে।
দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেটের নতুন সম্ভাবনা
স্টারলিঙ্কের এই উদ্যোগ সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের মতো দেশে, যেখানে অনেক দুর্গম এলাকায় এখনও ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছায়নি, সেখানে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট একটি যুগান্তকারী সমাধান হতে পারে। টেলিকম বিশেষজ্ঞ বুদকি বলেন, “যেখানে প্রচলিত তার বা টাওয়ারের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া কঠিন, সেখানে স্যাটেলাইটই একমাত্র বিকল্প। স্যাটেলাইটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, খোলা আকাশ থাকলেই কভারেজ পাওয়া যাবে।”
স্টারলিঙ্ক নিম্ন ভূ-কক্ষপথের (Low Earth Orbit) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে। এই পরিষেবা চালু হলে শুধু দুর্গম এলাকাই নয়, দেশীয় ফ্লাইটেও ইন্টারনেট ব্যবহার সম্ভব হবে। বুদকি জানান, “ভারতের ফ্লাইটের জন্য বিশেষ প্যাকেজ তৈরি হবে, যা যাত্রীরা উপভোগ করতে পারবেন। তবে প্রযুক্তি ও হার্ডওয়্যারের কারণে কখনও কখনও সামান্য সমস্যা হতে পারে, কিন্তু তা খুবই বিরল।”
এয়ারটেল ও জিওর ভূমিকা
ভারতের বৃহত্তম টেলিকম সংস্থা রিলায়েন্স জিও তাদের হাজার হাজার খুচরো দোকানে স্টারলিঙ্কের সরঞ্জাম বিক্রি করবে। অন্যদিকে, এয়ারটেলও একই ধরনের চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে, এই পরিষেবা চালুর জন্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। বুদকি বলেন, “ভারতে অনেকেই স্টারলিঙ্ক সম্পর্কে এখনও সম্পূর্ণভাবে জানেন না, কিন্তু এয়ারটেল ও জিওর নাম সবার কাছে পরিচিত। সরকারের ছাড়পত্র পেলেই পরিষেবা শুরু হবে।”
প্রাথমিকভাবে, এই পরিষেবা ব্যবসায়িক (B2B) ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে, যেমন কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্য খাতে। বুদকি আরও যোগ করেন, “এই পরিষেবার দাম আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বেশি হতে পারে, তবে সরকারি ভর্তুকি থাকলে দাম কমতে পারে। জিও যখন নতুন কিছু আনে, তখন দাম এমন হয় যে প্রতিযোগীরা চিন্তায় পড়ে এবং গ্রাহকরা উৎসাহিত হয়। ফ্রি ট্রায়ালও দেওয়া হতে পারে।”
স্টারলিঙ্কের বৈশ্বিক প্রভাব
স্টারলিঙ্ক বর্তমানে বিশ্বের ১২৫টির বেশি দেশে পরিষেবা দিচ্ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের সময় স্টারলিঙ্কই দেশটির ইন্টারনেট পরিষেবা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বুদকি বলেন, “যেসব দেশে স্টারলিঙ্ক চালু আছে, সেখানে বড় কোনো অভিযোগ নেই। এটি নির্ভরযোগ্য এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করে।”
ভারতের টেলিকম সংস্থাগুলোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বুদকি মনে করেন, এয়ারটেল ও জিও নিজেদের স্যাটেলাইট প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। “জিও সম্প্রতি ইন্ডিয়ান মোবাইল কংগ্রেসে তাদের স্যাটেলাইট প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছে। এয়ারটেলও আগে একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, তারা এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়, তাই স্টারলিঙ্কের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। এটি খরচ কমাতে সাহায্য করবে এবং ভবিষ্যতে তারা নিজেদের পরিষেবাও চালু করবে।”
সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায়
স্টারলিঙ্ক ২০২২ সাল থেকে ভারতে লাইসেন্সের জন্য অপেক্ষা করছে। তবে, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে অনুমোদন পেতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটনে এলন মাস্কের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে টেসলার ভারত প্রবেশ এবং স্টারলিঙ্কের পরিষেবা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভারতের ডিজিটাল পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে স্টারলিঙ্কের এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগকে বেগবান করবে এই প্রযুক্তি।