ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে নতুন আশা, S&P গ্লোবালের ইতিবাচক পূর্বাভাস, নেপথ্যে বর্ষা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা

ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ ক্রমশ উজ্জ্বল হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা S&P গ্লোবাল ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে (FY26) ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৫ শতাংশে উন্নীত করেছে, যা পূর্ববর্তী অনুমানের চেয়ে ০.২ শতাংশ বেশি। স্বাভাবিক বর্ষার প্রত্যাশা, অপরিশোধিত তেলের দাম হ্রাস এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার শক্তিশালী বৃদ্ধি – এই তিন স্তম্ভের ওপর ভর করেই S&P এই আশাব্যঞ্জক সংশোধনী এনেছে, যা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রানীতি কমিটির (MPC) ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

উন্নতির মূল চালিকাশক্তি:

S&P গ্লোবালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থনীতির এই ইতিবাচক গতি মূলত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল:

স্বাভাবিক বর্ষা: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর স্বাভাবিক প্রবাহ কৃষি উৎপাদনকে সুসংহত করবে, যা গ্রামীণ ভোগ ও চাহিদাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তেলের দাম হ্রাস: আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমে আসা ভারতের আমদানি বিল কমাতে সাহায্য করবে এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমাতেও সহায়ক হবে।

শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা: ভারতের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং ক্রমবর্ধমান ভোগব্যয় অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে।

সরকারি বিনিয়োগ: পরিকাঠামো এবং মূলধন বিনিয়োগের উপর সরকারের ধারাবাহিক গুরুত্ব অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে আরও শক্তিশালী করবে।

মুদ্রাস্ফীতি ও ঝুঁকি:

S&P জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মে মাসে খুচরো মুদ্রাস্ফীতি (CPI) ৭৬ মাসের সর্বনিম্ন ২.৮২ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্যের দাম কমার কারণে MPC অর্থবর্ষ ২৬-এর জন্য মুদ্রাস্ফীতি ৩.৭ শতাংশে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে, মূল মুদ্রাস্ফীতির (Core Inflation) সামান্য বৃদ্ধি এখনও ঝুঁকির কারণ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তা এবং আবহাওয়া-ভিত্তিক ঝুঁকিকে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন-চিন বাণিজ্য উত্তেজনা এবং ব্রিটেনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) সম্পন্ন হতে বিলম্ব এখনও ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের শক্তিশালী অবস্থান:

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় S&P গ্লোবাল মন্তব্য করেছে যে, ভারতের মতো বৃহৎ উদীয়মান অর্থনীতিগুলি অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে বিশ্বব্যাপী চাপের মোকাবিলা করতে সক্ষম হচ্ছে। অন্যদিকে, চিনের মতো রফতানি-নির্ভর দেশগুলি মার্কিন শুল্ক এবং দুর্বল আমদানির প্রভাবের মুখোমুখি হচ্ছে, যা ভারতের তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী অবস্থানকে তুলে ধরে।

সামগ্রিকভাবে, S&P গ্লোবালের এই নতুন পূর্বাভাস ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং দেশের আর্থিক ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy