
কিউবায় জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ধসে পড়ায় শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাতে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। এর ফলে এক কোটিরও বেশি মানুষ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে। দেশটির জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাত ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে দিয়েজমেরো সাবস্টেশনে একটি ত্রুটির কারণে পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়, যা জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিকল হয়ে পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিদ্যুৎসেবা পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। তবে কবে নাগাদ পুরোপুরি বিদ্যুৎ ফিরবে, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। রাজধানী হাভানায় সিএনএনের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রাস্তাঘাট ও ভবন সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বৈদ্যুতিক টর্চের আলোয় চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বারবার বিদ্যুৎ সংকট
কিউবায় জরাজীর্ণ অবকাঠামো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এর আগেও বারবার বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দেশটির বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়, যাকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবারের এই ঘটনা সেই সংকটেরই পুনরাবৃত্তি বলে মনে করছেন অনেকে।
কারণ নিয়ে দ্বিমত
কিউবার কর্মকর্তারা এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করে থাকেন। তাঁদের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে জ্বালানি আমদানি ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহে বড় বাধা সৃষ্টি হয়েছে। তবে সমালোচকদের মতে, কমিউনিস্ট সরকারের অবকাঠামোতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবও এই সমস্যার জন্য সমানভাবে দায়ী। তাঁরা বলছেন, সরকারের অগ্রাধিকারে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন বেশি গুরুত্ব পেলেও বিদ্যুৎ খাতে যথাযথ মনোযোগ দেওয়া হয়নি।
জনজীবনে প্রভাব
এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট কিউবার জনজীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। রান্না, পানি সরবরাহ এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল সাধারণ মানুষ এখন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা এই দ্বীপরাষ্ট্রে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির ঘাটতি আগে থেকেই মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলেছিল। এই বিদ্যুৎ সংকট সেই দুর্দশাকে আরও গভীর করেছে।
কিউবার সরকার এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারে কতটা সময় লাগবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও দেশটির বাসিন্দারা আশা করছেন দ্রুত সমাধান। এদিকে, এই ঘটনা সরকারের ওপর জনগণের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।