
ভারতের সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুধু দেশের মধ্যেই নয়, আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের কাছেও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। এই অভিযানের প্রশংসা করে একজন প্রথম সারির আমেরিকান নগর যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, এর মাধ্যমে ভারত আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক—উভয় ক্ষেত্রেই নিজেদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব জোরালোভাবে প্রদর্শন করেছে। একইসঙ্গে পাকিস্তানকে একটি স্পষ্ট বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
আমেরিকান বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ:
মডার্ন ওয়ারফেয়ার ইনস্টিটিউটের আরবান ওয়ারফেয়ার স্টাডিজের চেয়ারম্যান, কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জন স্পেন্সার ‘ইন্ডিয়া টুডে’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ভারত এই অভিযানের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে তারা “পাকিস্তানের যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময়” আক্রমণ করতে সক্ষম। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, পাকিস্তান যে চিনা বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে, তা ভারতের ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে একেবারেই টিকতে পারে না। এই শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রটি যুদ্ধের সময় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হানতে ব্যবহৃত হয়েছিল। স্পেন্সার ভারতের সফল প্রতিরক্ষারও প্রশংসা করেন এবং বলেন, ভারত সফলভাবে পাকিস্তানের গভীরে চালানো ড্রোন আক্রমণ এবং উচ্চ গতির ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করতে পেরেছে। তাঁর মতে, চিনা বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ভারতের তুলনায় দুর্বল।
চিনা প্রতিরক্ষা ভেদ করে ভারতীয় হামলা:
স্পেন্সার আরও উল্লেখ করেন যে, ভারতের ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র চিনা এবং পাকিস্তানি উভয় বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছিল, যা ভারতের উন্নত সামরিক সক্ষমতার প্রমাণ। ১০ মে ভারত পাকিস্তানের ১১টি বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ করে, যা ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে পাকিস্তানের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়েছিল। এই হামলায় ব্রহ্মোস এবং স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এর আগে, ৭ মে যখন অপারেশন সিঁদুর শুরু হয় এবং জঙ্গিদের আস্তানাগুলি ধ্বংস করা হয়, তখনও পাকিস্তানকে রক্ষাকারী চিনা বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে আটকাতে পারেনি।
ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষমতা:
ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি ভূপৃষ্ঠের যেকোনো স্থান থেকে (জাহাজ), সমুদ্রের সাবমেরিন থেকে, আকাশে যুদ্ধবিমান থেকে এবং স্থলের লঞ্চার থেকে—মোট চারটি আলাদা প্ল্যাটফর্ম থেকে নিক্ষেপ করা যেতে পারে। এটিই বিশ্বের একমাত্র ক্ষেপণাস্ত্র যা এই চারটি উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফর্ম থেকে নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখে। ভারত রাশিয়ার সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করেছে। ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদী এবং রাশিয়ার মস্কভা নদীর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। ব্রহ্মোস বিশ্বের দ্রুততম সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মধ্যে অন্যতম, যা শব্দের গতির চেয়ে তিনগুণেরও বেশি গতিতে উড়ে। এই অতি উচ্চ গতির কারণে শত্রুর বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এটিকে সহজে সনাক্ত করতে বা প্রতিহত করতে অক্ষম।
সব মিলিয়ে, কর্নেল জন স্পেন্সারের মতে, অপারেশন সিঁদুর ভারতের সামরিক সক্ষমতা এবং পাকিস্তানকে দেওয়া স্পষ্ট বার্তার প্রমাণ।