ব্যাঙ্ক জালিয়াতি কমলেও, প্রতারণার অঙ্ক বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ: রিপোর্ট রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দেশের ব্যাঙ্ক প্রতারণার চিত্র। ২০২৪-২০২৫ অর্থবর্ষের জন্য রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) প্রকাশিত বিস্তারিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে এক মিশ্র প্রবণতা: একদিকে যেমন প্রতারণার ঘটনার সংখ্যা কমেছে, তেমনই অন্যদিকে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত টাকার অঙ্ক বেড়েছে প্রায় তিন গুণ! আরও চিন্তার বিষয় হলো, বেসরকারি ব্যাঙ্কের তুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতেই প্রতারণার অঙ্ক অনেক বেশি।

টাকার অঙ্কে রেকর্ড বৃদ্ধি: ৩৬ হাজার কোটির বেশি প্রতারণা
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে মোট ৩৬ হাজার ১৪ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক প্রতারণা হয়েছে। যা তার আগের অর্থবর্ষ, অর্থাৎ ২০২৪ অর্থবর্ষের (১২ হাজার ২৩০ কোটি টাকা) তুলনায় প্রায় ১৯৪ শতাংশ বা প্রায় তিন গুণ বেশি। তবে, এই ব্যাপক আর্থিক বৃদ্ধির পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, সুপ্রিম কোর্টের ২০২৩ সালের একটি রায় মেনে আগের বছরের ১২২টি বড় অঙ্কের প্রতারণার মামলা (প্রায় ₹১৮,৬৭৪ কোটি) নতুন করে এই অর্থবর্ষে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আশার খবর হলো, প্রতারণার ঘটনার সংখ্যা কমেছে। ২০২৪ অর্থবর্ষে যেখানে ৩৬ হাজার ৬০টি প্রতারণার ঘটনা ঘটেছিল, সেখানে ২০২৫ অর্থবর্ষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৯৫৩-তে, যা প্রায় ৩৪ শতাংশের পতন।

রাষ্ট্রায়ত্ত বনাম বেসরকারি ব্যাঙ্ক: কে কোথায় এগিয়ে?
প্রতারণার সংখ্যা কমলেও, অর্থের অঙ্কে সরকারি ব্যাঙ্কগুলোই বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। ২০২৫ অর্থবর্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে মোট ২৫ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে, যা আগের অর্থবর্ষের ৯ হাজার ২৫৪ কোটি টাকার থেকে অনেক বেশি। এটি মোট প্রতারণার প্রায় ৭১.৩ শতাংশ। অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে প্রতারণার সম্মিলিত অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮৮ কোটি টাকা।

প্রতারণার ঘটনার সংখ্যা উভয় প্রকারের ব্যাঙ্কেই কমেছে:

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক: ৭ হাজার ৪৬০টি (২০২৪ অর্থবর্ষ) থেকে কমে ৬ হাজার ৯৩৫টি (২০২৫ অর্থবর্ষ)।
বেসরকারি ব্যাঙ্ক: ২৪ হাজার ২০৭টি (২০২৪ অর্থবর্ষ) থেকে কমে ১৪ হাজার ২৩৩টি (২০২৫ অর্থবর্ষ)।
ডিজিটাল পেমেন্ট ও ঋণ: প্রতারণার প্রধান ক্ষেত্র
আরবিআইয়ের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ব্যাঙ্ক প্রতারণার যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশই ঘটেছে ডিজিটাল পেমেন্টস সংক্রান্ত। অর্থাৎ, কার্ড বা ইন্টারনেট সংক্রান্ত জালিয়াতির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি (১৩,৫১৬টি ঘটনা), যা মোট ঘটনার প্রায় ৫৬.৫ শতাংশ। তবে, এই ধরনের প্রতারণার ক্ষেত্রে জড়িত টাকার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম (₹৫২০ কোটি)।

এর পাশাপাশি, ঋণ সংক্রান্ত জালিয়াতিও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যদিও ঋণ সংক্রান্ত প্রতারণার ঘটনা (৭,৯৫০টি) সংখ্যায় কম, কিন্তু এগুলোর সঙ্গে জড়িত টাকার অঙ্ক প্রায় ৩৩,১৪৮ কোটি টাকা, যা মোট প্রতারণার অর্থের ৯২ শতাংশেরও বেশি।

বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে মোট জালিয়াতির সিংহভাগই ডিজিটাল পেমেন্টস সংক্রান্ত। সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে জালিয়াতির বড় একটি অংশ হলো ঋণ সংক্রান্ত প্রতারণা, যা তাদের বড় আকারের ঋণের বই এবং তার সঙ্গে জড়িত ঝুঁকির প্রতিফলন।

এই রিপোর্ট ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন করে সতর্কবার্তা নিয়ে এসেছে। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম এবং ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে আরও কঠোর সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy