
বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলোর ‘অতিরিক্ত বিল’-এর দৌরাত্ম্য রুখতে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। চলতি বিধানসভা অধিবেশনে পেশ করা হয়েছে ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট (রেগুলেশন) সংশোধনী বিল, যা আইনে পরিণত হলে রোগীর পরিবারকে অযাচিত আর্থিক চাপ থেকে মুক্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
লিখিত সম্মতি ছাড়া বাড়তি বিল নয়
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই সংশোধনী বিলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকছে যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারকে যে চিকিৎসা প্যাকেজের কথা জানাবে, চিকিৎসা সেই নির্দিষ্ট প্যাকেজের মধ্যেই রাখতে হবে। যদি কোনো কারণে চিকিৎসার খরচ প্যাকেজের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তবে তা লিখিতভাবে রোগীর পরিবারকে জানাতে হবে এবং তাদের লিখিত সম্মতি নিতে হবে। এর পাশাপাশি, বাড়তি খরচের একটি বিস্তারিত বিল ও যুক্তিসহ ব্যাখ্যা হাসপাতালকে দিতে হবে।
এই সংশোধনী বিলটি পাশ হলে, রাজ্যের সমস্ত নথিভুক্ত বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার এই নতুন আইনের আওতায় আসবে। আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
রোগীর পরিবারের অভিযোগ: অপ্রয়োজনীয় খরচ চাপানো হয়
রোগীর পরিবারগুলো দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন যে, ছোটখাটো অপারেশন বা নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও প্যাকেজের বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়। অনেক সময় মূল রোগের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক রোগের চিকিৎসার বিল প্যাকেজে জুড়ে দেওয়া হয়, অথচ রোগীর পরিবারকে সময়মতো কিছুই জানানো হয় না। ফলে বিল মেটাতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়াও, অপ্রয়োজনে আইসিইউ বা ভেন্টিলেশনে রাখার অভিযোগও বারবার উঠেছে। এসব ক্ষেত্রে নতুন আইন কার্যকর হলে রোগীর পরিবার অনেকটা স্বস্তি পাবে বলে আশাবাদী রাজ্য সরকার।
হাসপাতালগুলির দাবি বনাম সরকারের বার্তা
হাসপাতালগুলির পাল্টা যুক্তি হলো, রোগের চিকিৎসায় মাঝেমধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে আনুষঙ্গিক খরচের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় চিকিৎসা চলাকালীন অন্য সমস্যা ধরা পড়লে, সেই অনুযায়ী অতিরিক্ত পরীক্ষা বা চিকিৎসা করতে হয়, যার ফলে খরচ বেড়ে যায়।
তবে সরকারের স্পষ্ট বার্তা—রোগী ও তাঁর পরিবারের সম্মতি ছাড়া কোনোভাবেই অতিরিক্ত অর্থ আদায় চলবে না। সংশোধনী বিলটি আইন হিসেবে কার্যকর হলে চিকিৎসা পরিষেবায় স্বচ্ছতা বাড়বে, রোগীর অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং চিকিৎসার নামে অতিরিক্ত আর্থিক শোষণের পথ অনেকটাই রুদ্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।