বৃষ্টিস্নাত কালীগঞ্জ উপনির্বাচন! বিজেপির এজেন্টকে কেন্দ্র করে উত্তাপ, বুথে বসতে বাধা

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই অবিরাম ধারার বৃষ্টি উপেক্ষা করে নদিয়া জেলার কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। তৃণমূল বিধায়কের অকাল প্রয়াণে শূন্য হওয়া এই আসনে সকাল ৭টা থেকে ভোটাররা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করছেন। সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভোটদানের হার ৩০.৬৪ শতাংশ। তবে বৃষ্টির ধারা ভোটের গতি কিছুটা শ্লথ করলেও, থেমে থাকেনি বিক্ষিপ্ত অভিযোগ ও বিতর্ক।

সাধারণত উপনির্বাচনে যে ধরনের উত্তেজনা দেখা যায়, সকাল থেকে কালীগঞ্জে তেমন বড়সড় অশান্তির খবর না মিললেও, মীরা ২ পঞ্চায়েতের মীরা শচীন্দ্রনাথ স্মৃতি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের ৭৪ নম্বর বুথে এক নতুন বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বিজেপির অভিযোগ, তাদের এজেন্টকে বুথে বসতে দেওয়া হয়নি, যা নিয়ে ব্যাপক হট্টগোল শুরু হয়। বিজেপি প্রার্থী আশিষ ঘোষ সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে, বিরোধী দলের এজেন্টদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যদিও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে।

ঘটনার গভীরে গিয়ে জানা যায়, ওই বুথের বিজেপি এজেন্ট রাকেশ ঘোষ কালীগঞ্জ বিধানসভার ভোটার হলেও, নির্দিষ্ট ৭৪ নম্বর বুথের ভোটার নন। এই বিষয়টি নিয়েই বিরোধী দলের এজেন্টরা আপত্তি তোলেন এবং প্রিসাইডিং অফিসারকে চাপ দেন যাতে রাকেশ ঘোষকে বসতে না দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত, সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই এজেন্টকে বুথে বসতে দেওয়া হয়। প্রিসাইডিং অফিসার পরবর্তীতে জানান যে, তিনি এজেন্টকে বসতে দিতে ইচ্ছুক থাকলেও বিরোধী পক্ষের বাধায় তা সম্ভব হচ্ছিল না।

ইভিএম বিভ্রাট ও প্রার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ

বিক্ষিপ্ত অশান্তির পাশাপাশি, কালীগঞ্জের ১৭৭ নম্বর বুথে ইভিএম বিকলের অভিযোগ তুলেছেন প্রাক্তন বাম বিধায়ক, যা ভোট প্রক্রিয়ায় সাময়িক বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এদিনের ভোটদানে অংশ নিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ এবং বিজেপি প্রার্থী আশিষ ঘোষ। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে আটটা নাগাদ তাঁরা দু’জনেই নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

কড়া নিরাপত্তা ও নজরদারি: এক অ্যাসিড টেস্ট

কালীগঞ্জ উপনির্বাচন চলবে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আগামী ২৩শে জুন ফলাফল ঘোষণা করা হবে। মোট ৩০৯টি বুথে আড়াই লক্ষেরও বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচন কমিশন এই উপনির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে। ভোটারদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত রাখতে ১৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও, প্রতিটি বুথের ভিতরে ও বাইরে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা নির্বাচন কমিশনের কড়া নজরদারির ইঙ্গিত দেয়।

এক নয়া উদ্যোগে, এবারই প্রথম ভোটের লাইন পরিচালনার জন্য রাজ্য পুলিশের পরিবর্তে এনসিসি ক্যাডেট ও স্কাউটদের কাজে লাগানো হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে সকাল থেকেই কালীগঞ্জের ভোটকেন্দ্রগুলিতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। ভোটারদের মোবাইল নিয়ে বুথের ভিতর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভোটের অশান্তির সঠিক তথ্য পেতে কুইক রেসপন্স টিম এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ির মাথায় বিশেষ ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর দিনভর কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটের কাজে তদারকি করছে। নদীয়ার এই আসনে তৃণমূল, বিজেপি এবং কংগ্রেস সমর্থিত বামফ্রন্ট – এই তিন প্রধান দলের মধ্যে এক ত্রিমুখী লড়াই চলছে। ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচন যেন প্রতিটি রাজনৈতিক দলের জন্য এক অ্যাসিড টেস্ট, যেখানে নিজেদের জনসমর্থন এবং সাংগঠনিক শক্তি পরখের সুযোগ মিলছে। বৃষ্টি ভেজা দিনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন করাই এখন নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান লক্ষ্য।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy