
হোলি—ভারতের অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় উৎসব, যা সারা দেশজুড়ে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়। তবে বৃন্দাবনের হোলি উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, কারণ এখানেই রাধা-কৃষ্ণের ঐশ্বরিক প্রেমের স্মরণে রঙের উৎসব উদযাপিত হয় ব্যতিক্রমী আয়োজনে।
বৃন্দাবনে হোলির আগে এক বিশেষ রীতি পালন করা হয়—ফুলের হোলি। রঙ্গভরী একাদশী থেকে এই উৎসবের সূচনা হয় বাঁকে বিহারী মন্দিরে। পুরোহিত মশাই পুজো সম্পন্ন করার পরেই শুরু হয় ফুলের হোলি, যেখানে ভক্তরা একে অপরের ওপর রঙিন ফুল ছিটিয়ে দেন। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার ভক্ত মন্দির চত্বরে সমবেত হন এবং এই বিশেষ রীতি উপভোগ করেন।
দোলযাত্রার দিন বৃন্দাবনের গোপিনিদের মতোই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে রঙের উৎসবে মেতে ওঠেন। ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাই একে অপরের গালে আবির মেখে আনন্দ ভাগ করে নেন। পাশাপাশি হয় মিষ্টান্ন বিতরণ ও ভজন-কীর্তনের আয়োজন। বাঁকে বিহারী মন্দির, গুলাল কুণ্ড ও নন্দগাঁও-বরসানার লটমার হোলি এই অঞ্চলের বিশেষ আকর্ষণ।
বৃন্দাবনের হোলির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি। বলা হয়, কৃষ্ণ তাঁর গায়ের গাঢ় বর্ণের কারণে শঙ্কিত ছিলেন, যদি রাধা তাঁকে গ্রহণ না করেন! তখন যশোদা মা পরামর্শ দেন, রাধার গায়ে রং মাখিয়ে দিতে। কৃষ্ণ সে কথাই করেন, আর সেই থেকেই শুরু হয় রঙের এই উৎসব।
একসময় বিধবাদের হোলি খেলায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে বৃন্দাবনে এই নিয়মের পরিবর্তন ঘটেছে। সমাজের রূঢ় বিধিনিষেধের বেড়াজাল ভেঙে বহু বিধবা নারীও হোলির আনন্দে অংশ নেন, যা সামাজিক পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
বৃন্দাবনের হোলি শুধুমাত্র ধর্মীয় বা পৌরাণিক গুরুত্ব বহন করে না, এটি সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসবও বটে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে রঙে মেতে ওঠেন, ভুলে যান পার্থক্যের দেয়াল।
এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব প্রত্যেক বছর হাজার হাজার ভক্ত ও পর্যটকদের আকর্ষণ করে, যা ভারতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন।