
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা আইকিউএয়ার-এর সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ২০টি শহরের মধ্যে ১৩টি অবস্থিত ভারতে। একইসঙ্গে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী শহর হিসেবে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি।
ভারতে দূষণের ভয়াবহ চিত্র
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বাইরনিহাট বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ভারতের অন্যান্য দূষিত শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাবের মুলানপুর, ফরিদাবাদ, লোনি, নয়াদিল্লি, গুরুগ্রাম, গঙ্গানগর, গ্রেটার নয়ডা, মুজাফফরনগর, হনুমানগড় এবং নয়ডা।
আইকিউএয়ার-এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩ সালে ভারত বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক দূষিত দেশ ছিল। তবে ২০২৪ সালে ভারতের অবস্থান পঞ্চম স্থানে নেমে এসেছে। যদিও বাতাসের গুণমান সামান্য উন্নত হয়েছে, তবে এখনও অনেক শহরে দূষণের মাত্রা মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে।
দূষণের প্রধান কারণ ও প্রভাব
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে বাতাসে পিএম ২.৫-এর ঘনত্ব ৭ শতাংশ কমলেও তা এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৩ সালে ভারতে প্রতি কিউবিক মিটারে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ ছিল ৫৪.৪ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০২৪ সালে ৫০.৬ মাইক্রোগ্রামে নেমে এসেছে। তবে দিল্লিতে এই মাত্রা এখনও অনেক বেশি, যেখানে প্রতি কিউবিক মিটারে পিএম ২.৫-এর ঘনত্ব ৯১.৬ মাইক্রোগ্রাম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী, প্রতি কিউবিক মিটারে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ ৫ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে থাকা উচিত। কিন্তু ভারতের প্রায় ৩৫ শতাংশ শহরে এই মান ১০ গুণেরও বেশি। এর ফলে ভারতীয়দের গড় আয়ু ৫.২ বছর কমে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত উদ্বেগ
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র বায়ু দূষণের কারণেই ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন। তার মতে, ভারত বায়ুর মান সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে উন্নতি করলেও, যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে এখনো পিছিয়ে রয়েছে। তিনি বায়ুদূষণ কমাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ভারতের শহরগুলোর বায়ুর মান ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। সরকার এবং নাগরিকদের সচেতনভাবে দূষণ কমানোর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে বায়ুর গুণমান উন্নত হয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।