বিশেষ: ৪৬ বছর আগেও ছিল বাংলায় ‘বিষাদের পুজো’, জেনেনিন কী ঘটেছিল সে বার?

হাওয়ায় দুলছে কাশফুল, আকাশে মেঘের খেলা, বাঁশের মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে। কিন্তু এই বছর, দুর্গাপুজোর আগমনী বার্তা বাঙালির মনে তেমন উচ্ছ্বাস জাগাচ্ছে না।

পুজোর আনন্দ কেন ফিকে?

এক সময় পুজো মানেই ছিল আনন্দ, উৎসব, নতুন জামা, মিষ্টি। কিন্তু আজকাল পুজোর আগমনী বার্তা শুনলে মনে হয় যেন কিছু একটা অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। কেন?

সম্প্রতি রাজ্যে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা পুরো রাজ্যকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। মানুষের মনে ক্ষোভ, প্রতিবাদ, বিচারের দাবি জাগিয়ে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে পুজোর আনন্দ উদযাপন করা যেন অনেকের কাছেই অনৈতিক মনে হচ্ছে।

দাম বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, এই সব কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে পুজোর খরচ করার মতো অবস্থা অনেকেরই নেই। যদিও করোনা মহামারি কেটে গেছে, তার প্রভাব এখনও মানুষের মনে রয়ে গেছে। অনেকেই এখনও বড়সড় কোনো অনুষ্ঠান করতে ভয় পাচ্ছেন।

অতীতের স্মৃতি:

১৯৭৮ সালের শরৎ, বাংলায় পুজোর আগমনী বার্তা বয়ে আনছিল আনন্দের ঝরে। কিন্তু এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। প্রকৃতির রোষে পুরো বাংলাই ডুবে গিয়েছিল। সেই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আকাশ থেকে যে জল ঝরেছিল, তা বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সূচনা করেছিল।

২৫ সেপ্টেম্বর, বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। শুরুতে হালকা ফোটা, তারপর ধারাবাহিক বৃষ্টি, আর তারপর এক প্রলয়। তিন দিন ধরে রাজ্যের বুকে ঝরেছে জল। ৯৪৪.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি! সংখ্যাটা ছোট হলেও তার প্রভাব ছিল বিশাল। নদী বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল, গ্রামগঞ্জের ঘরবাড়ি ডুবে গিয়েছিল, মানুষের জীবন যাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

কলকাতা শহরও বন্যার কবলে পড়েছিল। রাজপথগুলো নদীতে পরিণত হয়েছিল। মানুষ নৌকা করে রাস্তায় চলাচল করছিল। গড়িয়াহাট, লেকটাউন এলাকাগুলি জলে ডুবে গিয়েছিল। গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ ছিল। মানুষ গাছের ডালে, ছাদে আশ্রয় নিয়েছিল। খাদ্যের অভাব, পানির দূষণ, রোগব্যাধি – এই সব মিলে মানুষের জীবন যাত্রা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছিল।

এই দুর্যোগের মধ্যে দুর্গাপুজোর আগমন মানুষের মনে কোন আনন্দ নিয়ে আসেনি। বরং, তাদের মনে দুঃখ, কষ্ট আর হতাশার ছায়া ছিল। অনেক জায়গায় পুজোই হয়নি। যেখানে হয়েছিল, সেখানেও খুবই সাধারণভাবে। পুজো মণ্ডপগুলিও জলমগ্ন হয়ে গিয়েছিল।

১৯৭৮ সালের বন্যা বাংলার ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। এই বন্যা মানুষকে একদিকে যেমন দুঃখ দিয়েছিল, অন্যদিকে মানবতার মহান দৃষ্টান্তও তুলে ধরেছিল। এই দুর্যোগের সময় মানুষ একে অপরকে সাহায্য করেছিল, একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
মহানগরীর রাজপথ যেন নদীর চেহারা নিয়েছিল। বালিগঞ্জ স্টেশনের কাছে নৌকা চলেছিল। গড়িয়াহাটের চারপাশের রাস্তা জলের তলায়। লেকটাউন, শ্রীভূমিতে কোমর সমান জল। সকলে ঘরবন্দি। জলবন্দি মানুষের সে কী অসহায় চেহারা! এই বছরের পুজোও সেই সময়ের মতোই একটা শূন্যতা নিয়ে আসছে।

বর্তমানের বাস্তবতা:
আজকের দিনেও বাংলার অনেক জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে পুজো উদযাপন করা অনেকের কাছেই অনুচিত মনে হচ্ছে।

পুজোর আসল অর্থ:
দুর্গাপুজো শুধুমাত্র আনন্দ উদযাপন নয়, এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা মঙ্গল কামনা করি। এই বছর যদিও পুজোর আনন্দ ফিকে হয়েছে, তবে আমরা মায়ের কাছে শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করতে পারি।

পুজোর আনন্দ ফিকে হয়ে গেলেও, বাঙালির মনে দেবীমায়ের প্রতি ভক্তি আজও অটুট রয়েছে। আশা করি, আগামী বছর পুজোর আনন্দ ফিরে আসবে।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy