
গত কয়েক মাস ধরে খবরের শিরোনামে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাসার মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস। বোয়িংয়ের স্টারলাইনার ক্যাপসুলে চড়ে তিনি ও তাঁর সহকর্মী বুচ উইলমোর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) গিয়েছিলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁরা মহাকাশে আটকে রয়েছেন। তবে নাসা সম্প্রতি জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই তাঁরা পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।
১৯৯৮ সালে নাসার জন্য নির্বাচিত হওয়া সুনীতা উইলিয়ামস অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন নৌসেনার ক্যাপ্টেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি মহাকাশ গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ২০২৪ সালের জুনে তিনি ও বুচ উইলমোর বোয়িং স্টারলাইনারের প্রথম মানববাহী পরীক্ষামূলক মিশনে অংশ নেন। মূলত ৮ দিনের এই মিশন দীর্ঘায়িত হয়েছে ক্যাপসুলের প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে। হিলিয়াম লিক এবং প্রপালশন সিস্টেমের সমস্যার জন্য তাঁদের ফেরার সময় বারবার পিছিয়ে গেছে। তবে নাসা এখন স্পেসএক্সের ক্রু-৯ ড্রাগন ক্যাপসুলের মাধ্যমে তাঁদের ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে।
মহাকাশচারীদের বেতন ও সুবিধা:
মহাকাশে কাজ করা যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই এর জন্য প্রয়োজন অসাধারণ দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ। সুনীতার মতো মহাকাশচারীরা আমেরিকার সরকারি জেনারেল স্কেল (GS) বেতন কাঠামোর আওতায় পড়েন। তাঁর গ্রেড GS-13 থেকে GS-15-এর মধ্যে। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, GS-13 গ্রেডের মহাকাশচারীরা বছরে $৮১,২১৬ থেকে $১,০৫,৫৭৯ (প্রায় ৭০ লক্ষ থেকে ৯১ লক্ষ টাকা) এবং GS-15 গ্রেডের অভিজ্ঞ মহাকাশচারীরা $১,৪৬,৭৫৭ (প্রায় ১.২৭ কোটি টাকা) পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।
বেতন ছাড়াও নাসা তাঁদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য বিমা, নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা, বিজ্ঞানভিত্তিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগের মতো সুবিধা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া, মহাকাশে থাকাকালীন ফোন কল ও কেয়ার প্যাকেজ পাওয়ার সুবিধাও রয়েছে। নাসা মহাকাশচারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দেয়। মিশনের আগে, সময়কালে এবং পরে তাঁদের জন্য মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রশিক্ষণ ও চ্যালেঞ্জ:
মহাকাশচারীদের জন্য নাসা উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। স্পেসওয়াক, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এই প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। সুনীতা ও বুচের বর্তমান পরিস্থিতি এই পেশার কঠিন দিকটিকে তুলে ধরেছে। গত জুনে শুরু হওয়া তাঁদের মিশনটি স্টারলাইনারের ত্রুটির কারণে ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে। স্টারলাইনারটি গত সেপ্টেম্বরে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে, কিন্তু তাঁরা মহাকাশে থেকে গেছেন।
ফেরার প্রত্যাশা:
নাসার সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, স্পেসএক্সের ক্রু-১০ মিশন আগামী ১২ মার্চ লঞ্চ করবে। এরপর সুনীতা ও বুচ ক্রু-৯ ড্রাগন ক্যাপসুলে করে ১৬ থেকে ২০ মার্চের মধ্যে পৃথিবীতে ফিরবেন। এই দীর্ঘ সময় মহাকাশে কাটানো সত্ত্বেও তাঁরা সুস্থ আছেন এবং গবেষণায় সক্রিয় রয়েছেন বলে নাসা জানিয়েছে।
সুনীতা উইলিয়ামসের এই যাত্রা তাঁর অভিজ্ঞতা ও দৃঢ়তার প্রমাণ। তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে গোটা বিশ্ব, বিশেষ করে ভারতীয়রা, যারা তাঁকে নিয়ে গর্বিত।