বিশেষ: ‘সুখী দেশের’ মানুষেরা কি আসলেই সুখী? জেনেনিন কি বলছে বর্তমান পরিস্থিতি

পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ কারা? ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইসরায়েল এবং নেদারল্যান্ডসের বাসিন্দারাই সবচেয়ে সুখী মানুষ। এদিকে, কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলি সামরিক দখলের অধীনে বসবাস করা ফিলিস্তিনিদের অবস্থান তালিকায় ৯৯তম।
কিন্তু সুখী তালিকার দেশের মানুষেরা কী আসলেই সুখী?

প্রতি বছর (২০ মার্চ) ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা ও জনমত সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ সুখী’ দেশের এ তালিকা প্রকাশ করে। তালিকায় থাকা দেশগুলোর কয়েক হাজার মানুষের দেওয়া মতামতের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয় প্রতিবেদন।

ব্যক্তিজীবনে একজন মানুষ কতটা সুখী ০ থেকে ১০ পয়েন্টের ভিত্তিতে সে সম্পর্কে এই মানুষেরা তাদের মতামত জানান। জীবন সম্পর্কে তাদের ব্যক্তিগত মূল্যায়নের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করে প্রতিবছর ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট বা বিশ্বের ‘সুখী’ দেশগুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়।

২০২৩ সালের তালিকায় সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে যাদের নাম এসেছে, তার বেশির ভাগই ইউরোপের। উদাহরণ হিসেবে তালিকার শীর্ষে থাকা, অর্থাৎ ‘সবচেয়ে সুখী’ দেশ ফিনল্যান্ডের কথা বলা যায়। টানা গত ছয় বছর ধরে দেশটি সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।

সুখী দেশের তালিকায় যেমন শীর্ষে, তেমনি অবসাদগ্রস্ত মানুষেরা যে ওষুধ ব্যবহার করেন, সেই ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রেও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইসল্যান্ড এবং ষষ্ঠ স্থানে থাকা সুইডেনের অবস্থাও ফিনল্যান্ডের মতোই।

অপর দিকে এ বছরের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে ভারতের অবস্থান তলানিতে, ১২৬তম। কিন্তু পৃথক একসমীক্ষায় আবার ভারতের অবস্থান এর চেয়ে অনেক ওপরে। এ সমীক্ষায় কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্যের মতো বিষয়গুলোকে চলক হিসেবে ধরে তৈরি করা। এদিকে আবার এ–সংক্রান্ত আরেকটি তালিকা গ্লোবাল হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী চীন বিশ্বের ‘সবচেয়ে সুখী’ দেশ।

গ্যালাপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সুখী দেশের এ তালিকা তৈরিতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য তারা বেসামরিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ওপর জরিপ চালায়।

তবে কারাগার, নার্সিং হোম, প্রবীণ নিবাসের মতো এ রকম আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের বাসিন্দার ওপর সমীক্ষায় চালানো হয় না। এমনকি ‘নিরাপদ’ নয়, এমন এলাকাগুলোতেও সমীক্ষায় চালানো হয় না। এ রকম কত রকম প্রাতিষ্ঠানিক জায়গায় সমীক্ষায় চালানো হয় না, সেটা অবশ্য স্পষ্ট করে বলা নেই; বিশেষ করে যেসব দেশের সমাজে বিভাজন অনেক গভীর কিংবা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের মতো যেসব দেশে একটা বড়সংখ্যক মানুষ কারাবন্দী। এই বন্দীর বেশির ভাগই আবার কৃষ্ণাঙ্গ।

এ ছাড়া সাংস্কৃতিক বৈষম্যের বিষয়টিও রয়েছে। সুখী দেশের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে এই বৈষম্য নিয়েই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়। ২০২৩ সালের এক গবেষণায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘এ নামে একটি দেশের মানুষ বি নামের আরেকটি দেশের মানুষের চেয়ে যে বেশি সুখী, এটা কীভাবে নির্ধারণ করা হয়, যখন সুখ নিয়ে এ দেশের মানুষের এবং বি দেশের মানুষের ধারণা ভিন্ন ভিন্ন?’

গবেষকেরা বলছেন, সুখী দেশের এ তালিকার বড় সমস্যা হলো সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর দৃষ্টিকোণ, তাদের শিক্ষা, শিল্পায়ন, ধনী, গণতান্ত্রিক বা আজগুবি এক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তারা কতটা সুখী বা এই জীবনযাপন নিয়ে তাঁরা কতটা সন্তুষ্ট। এ ক্ষেত্রে এই মানুষেরা ব্যক্তিগত অবস্থান ও কী অর্জন করেছেন, তার ওপর ভিত্তি করে মতামত দেন।

আরো সহজ করে বললে, যদি একজনকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘আপনি কতটা সুখী বা এই জীবনযাপনে কতটা সন্তুষ্ট?’ এমন প্রশ্ন করার মানে হলো ওই ব্যক্তিকে মূলত তার ব্যক্তিজীবনের অর্জন নিয়ে ভাবতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রে সুখী হওয়ার অন্যতম কিছু চলক যেমন আশপাশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক, অর্থাৎ আন্তসম্পর্ক বা সামাজিক সম্প্রীতির মতো বিষয়গুলো বাদ পড়ে।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, সুখ একজন ব্যক্তির একার ওপর নির্ভর করে না। এর সঙ্গে অনেক মানুষ বা অনেক কিছু সম্পৃক্ত। সুখের মূলে রয়েছে একজন মানুষের তার পরিবার বা সহকর্মীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কতটা ভালো তার ওপর। একজন মানুষ কতটা সুখী, সেটা নির্ণয় করার ক্ষেত্রে এটিকে একটি বড় চলক হিসেবে বর্ণনা করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। জাপান, নাইজেরিয়া ও পোল্যান্ডের মানুষদের নিয়ে এ সমীক্ষায় চালানো হয়েছিল।

সূত্র: আল-জাজিরা

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy