বিশেষ: সমুদ্র যাত্রার সময় জাহাজের পতাকা কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে? জেনেনিন এর মূল কারণ

সমুদ্রে ভাসমান জাহাজে উড়তে থাকে পতাকা। অনেক সময় এক দেশের জাহাজে অন্য দেশের পতাকাও ওড়ে। গ্রীস হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জাহাজ মালিকের দেশ। কিন্তু সেখানকার বেশিরভাগ জাহাজই গ্রীসের পতাকা বহন করে না।

২০১৯সালের জুলাই মাসে মালবাহী জাহাজ স্টেনা ইমপেরো আটক করেছিল ইরান। তখন জাহাজটিতে ব্রিটিশ পতাকা উড়ছিল। কিন্তু আসলে এই জাহাজটির মালিক একটি সুইডিশ কোম্পানি এবং পুরো জাহাজে কোন ব্রিটিশ নাগরিক ছিল না। কিন্তু এটা অস্বাভাবিক নয়। বরং অনেক সময়েই দেখা যায় যে, জাহাজটি এমন একটি দেশের পতাকা নিয়ে চলাচল করছে, যার মালিক একেবারেই ভিন্ন দেশের লোক। কিন্তু কেন এটা করা হয়? তাতে কি সুবিধা?

ওপেন রেজিস্ট্রি পদ্ধতিতে, যাকে অনেক সময় ‘সুবিধা অনুযায়ী পতাকা’ বলেও বর্ণনা করা হয়। এই পদ্ধতিতে জাহাজ যেকোনো দেশের তালিকাভুক্ত হতে পারে। জাহাজের মালিক অন্য দেশের হলেও তাতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে অন্য পদ্ধতিগুলোয় পতাকার বিষয়ে বেশ কড়াকড়ি রয়েছে যে, এসব জাহাজের মালিক কে হতে পারবে এবং কিভাবে জাহাজ পরিচালনা করা হবে। যে দেশে নিবন্ধন করা হয়, সে দেশের আইনকানুন জাহাজটিকে মেনে চলতে হয়। পানামা, মার্শাল আইল্যান্ড আর লাইবেরিয়া হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফ্ল্যাগ স্টেট বা পছন্দের পতাকার দেশ। যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যিক জাহাজের তালিকায় প্রায় তেরশো জাহাজ তালিকাভুক্ত রয়েছে। এই লাল পতাকার ব্যানারের দলে যুক্তরাজ্য, ক্রাউন ডিপেণ্ডেনসিস (আইল অফ ম্যান, গার্নসে, এবং জার্সি) এবং যুক্তরাজ্যের ওভারসিজ টেরিটরি (অ্যানগুলিয়া,বারমুডা, দ্যা ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, দ্যা কেইম্যান আইল্যান্ড, দ্যা ফকল্যান্ড আইল্যান্ড, জিব্রাল্টার, মন্টসেরাত, সেন্ট হেলেনা এবং দ্যা টার্ক ও কাইকোস আইল্যান্ড) মিলে বিশ্বের নবম বৃহত্তম জাহাজ বহরে পরিণত হয়েছে।

অনেকগুলো বাণিজ্যিক কারণ বিবেচনায় রেখে জাহাজ মালিকরা নিবন্ধন করার দেশটিকে বাছাই করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে সেখানকার আইনকানুন, করের হার, সেবার মান। জাহাজের মালিক গ্রীসের হলেও জাহাজই গ্রীসের পতাকা বহন করে না-এর একটি বড় কারণ, সেখানে এজন্য অনেক বেশি অংকের ট্যাক্স দিতে হয়। বরং ‘ফ্ল্যাগ স্টেট, অনেক সময় দেখা যায় যেগুলো একটু গরীব দেশ, তারা জাহাজ নিবন্ধন করে অর্থ আয় করার সুযোগ পায়।

যেমন জাহাজ নিবন্ধন খাত থেকে পানামার অর্থনীতিতে প্রতিবছর কোটি কোটি ডলার যোগ হয়। এখানকার নিবন্ধন পদ্ধতির কারণে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে জাহাজের কর্মীদের নিয়োগ দেয়া যায়, যা কোম্পানির খরচও অনেক কমিয়ে আনে। এই ‘সুবিধা অনুযায়ী পতাকা’ পদ্ধতির অনেক সমালোচনা রয়েছে, বিশেষ করে এর দুর্বল নিয়মাবলী আর তদারকির অভাব। যা অনেক সময় আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের নিয়মের বিরুদ্ধে চলে যায়।

তবে এখনো এই ব্যবস্থার অনেক সমালোচনা করা হয়। ভিন্ন দেশের পতাকাবাহী হওয়ার কারণে অনেক সময় মজুরি বৈষম্য বা খারাপ কাজের পরিবেশর জন্য মালিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। কোন দেশে নিবন্ধন করার পর পতাকা বহনের পাশাপাশি ঐ জাহাজের ওপর ঐ দেশের আইন কার্যকর হবে। পতাকাবাহী জাহাজের কোনো অপরাধের জন্য দায়দায়িত্ব বহন করবে যে দেশে তালিকাভুক্ত হয়েছে, সেই দেশটি।

জাতিসংঘের কনভেনশন ফর দি ল’ অফ দি সী অনুযায়ী, সমুদ্রে চলাচলের সময় জাহাজে যেন সবরকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে, সেটা নিশ্চিত করবে নিবন্ধন করা দেশটি, যাদের পতাকা ওই জাহাজে রয়েছে। এটা খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় যে, কোন একটা দেশে জাহাজ নিবন্ধন এবং ওই দেশের পতাকা জাহাজটি বহন করলেও, এই নিবন্ধনের পুরো কাজটি হয়তো করা হচ্ছে আরেকটি দেশে।

জাহাজ নিবন্ধনের এই অস্বাভাবিক পদ্ধতি অনেক সময় নিরাপত্তা ঝুঁকিরও তৈরি করে। নিবন্ধনকারী কোনো দেশের পক্ষে তালিকাভুক্ত হওয়া সব জাহাজকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়।

সূত্র : বিবিসি

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy