
কৃষ্ণ শুধু একজন দেবতা নন, তিনি একজন দার্শনিকও। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনকে গীতা উপদেশ দিয়ে তিনি মানবজাতিকে জীবনের রহস্য বুঝিয়েছিলেন।
গীতা শুধু একটা ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি জীবনের একটি নির্দেশিকা। গীতার ৭০০টি শ্লোকের প্রতিটিতেই জীবনের গভীর সত্য লুকিয়ে আছে। যেমন, দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৬২তম ও ৬৩তম শ্লোকে কৃষ্ণ মনের রোগের কথা বলেছেন। আমরা কখনো কখনো কোনো একটা বিষয়ে এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়ি যে, সেই চিন্তাই আমাদের মনে রাগ, ঘৃণা জাগিয়ে তোলে। আর এই নেতিবাচক ভাবনাই আমাদের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।
গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৬২তম ও ৬৩তম শ্লোকে শ্রী কৃষ্ণ রাগ ও এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
শ্লোক: ধ্যাতো বিশ্বাঁপুঁসঃ সংগস্তেশূপজায়তে।
সংগতসঞ্জয়তে কামঃ কামতক্রোধবিজয়তে।
ক্রোধাদ্ভবতি সমোহাঃ সমোহাতস্মৃতিভ্রমঃ।
স্মৃতিভ্রমশদ্বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশতপ্রণাশ্যতি ॥
এই শ্লোকের মাধ্যমে শ্রী কৃষ্ণ মনের মধ্যে উদ্ভূত ব্যাধি ও কষ্টের উৎপত্তি ও ক্রমান্বয়ে বিকাশের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে আমরা যদি কোনো বিষয়ে অবিরত চিন্তা করি, তা আমাদের মানসিক অবস্থার প্রভাবিত করে। এই চিন্তা আমাদের কামনা বৃদ্ধি করে এবং অতৃপ্ত কামনা রাগের জন্ম দেয়। রাগ আমাদের সংযুক্তি সৃষ্টি করে এবং সংযুক্তির ফলে স্মৃতিভ্রম হয়। স্মৃতিভ্রম হলে বুদ্ধিমত্তা নষ্ট হয়, এবং বুদ্ধিমত্তা নষ্ট হলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাই।
কিন্তু কৃষ্ণ আমাদের সমাধানও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভক্তিই সব সমস্যার সমাধান। যখন আমরা ভগবানকে ভক্তি করি, তখন আমাদের মন শান্ত হয় এবং আমরা সঠিক পথে চলতে পারি। গীতার ১৮ তম অধ্যায়ে কৃষ্ণ বলেন, সকল ধর্ম ত্যাগ করে আমার শরণে আসো, আমি তোমাকে সকল পাপ থেকে মুক্ত করব।
আজকের এই দিনে আমাদের সবারই গীতার শিক্ষা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করা উচিত। যেমন, কৃষ্ণ আমাদের শিখিয়েছেন যে, ক্রোধ, হিংসা, ঈর্ষা এই সব নেতিবাচক ভাবনা থেকে মুক্ত হতে হবে। আমাদের সবার মধ্যে একটা ভালো মানুষ থাকে। সেই ভালো মানুষটিকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
কল্পনা করুন, যদি আমরা সবাই গীতার শিক্ষা অনুসারে জীবন যাপন করি, তাহলে আমাদের সমাজ কতটা সুন্দর হবে! কোনো আর যুদ্ধ হবে না, কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না। সবাই মিলে শান্তি ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করবে।