বিশেষ: মাউন্ট এভারেস্টকে কেন ‘সর্বোচ্চ কবরস্থান’ বলে ডাকা হয়? জেনেনিন সেই কারণ?

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। নেপালে এটি সগরমাথা এবং তিব্বতে চোমোলাংমা নামে পরিচিত। ৮৮৪৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই সুবিশাল শৃঙ্গটি সারা বিশ্বের পর্বতারোহীদের কাছে এক স্বপ্নের গন্তব্য। এর চূড়ায় আরোহণের চ্যালেঞ্জ ও গৌরব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রতি বছর শত শত অভিযাত্রী পাড়ি জমান হিমালয়ের কোলে। তবে এভারেস্ট তার শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্যের পাশাপাশি ধারণ করে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা – এটি পরিচিত ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ কবরস্থান’ নামে।

কেন এভারেস্টকে ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ কবরস্থান’ বলা হয়?

মাউন্ট এভারেস্টকে এমন এক বেদনাদায়ক নামে ডাকার পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ:

  • মৃতদেহ উদ্ধারের চরম অসুবিধা: এভারেস্টের দুর্গম পরিবেশ এবং আরোহণের সময়কার চরম প্রতিকূলতা ও ঝুঁকির কারণে এখানে মারা যাওয়া পর্বতারোহীদের মৃতদেহ উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। অত্যন্ত উচ্চতায় সরু পথ, তীব্র ঠান্ডা এবং অক্সিজেনের অভাব উদ্ধার কাজকে দুঃসাধ্য করে তোলে।
  • মৃত্যুর সংখ্যা: পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯২০ সাল থেকে ৫০০ জনেরও বেশি পর্বতারোহী এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের অনেকের মৃতদেহ আজও পর্বতের বরফের মধ্যে চাপা পড়ে আছে।
  • অবশিষ্ট স্মৃতিস্তম্ভ: এভারেস্টের পথে কিছু মৃতদেহ বরফের মধ্যে এমনভাবে সংরক্ষিত হয়ে আছে যে সেগুলি স্পষ্ট দৃশ্যমান। এই মৃতদেহগুলি আরোহণকারী অন্যান্য পর্বতারোহীদের জন্য এক বেদনাদায়ক স্মৃতিস্তম্ভ বা পথে নির্দেশকের মতো কাজ করে।

মাউন্ট এভারেস্টে এত মৃত্যুর কারণ কী?

এভারেস্টের চূড়া জয় করতে গিয়ে এত বিপুল সংখ্যক পর্বতারোহীর প্রাণহানির নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ:

  • অত্যধিক উচ্চতা: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৮৪৮ মিটার উচ্চতায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারণ অসম্ভব। মানুষের শরীর অতিরিক্ত উচ্চতায় টিকে থাকার জন্য তৈরি নয়।
  • অক্সিজেনের অভাব: উচ্চতার সাথে সাথে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ অত্যন্ত কমে যায়। এতে পর্বতারোহীদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
  • প্রতিকূল আবহাওয়া: এভারেস্টের আবহাওয়া অত্যন্ত পরিবর্তনশীল এবং চরমভাবাপন্ন। তীব্র ঠান্ডা, আকস্মিক ঝড়, এবং অপ্রত্যাশিত তুষারপাত পর্বতারোহীদের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
  • অভিজ্ঞতার অভাব: অনেক সময় প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের অভাব সত্ত্বেও কিছু পর্বতারোহী ঝুঁকি নিয়ে এভারেস্ট আরোহণের চেষ্টা করেন, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
  • অন্যান্য কারণ: উচ্চতাজনিত অসুস্থতা, শারীরিক অসুস্থতা, আকস্মিক দুর্ঘটনা (যেমন পড়ে যাওয়া বা তুষারধস), এবং পর্বতারোহণের সরঞ্জামের যান্ত্রিক ত্রুটি বা ব্যর্থতাও মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

মাউন্ট এভারেস্ট তার অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবাসস্থল হলেও, ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ কবরস্থান’ হিসেবে পরিচিতি এক গভীর বেদনাদায়ক সত্য। এই পর্বতশৃঙ্গটি আরোহীদের অদম্য সাহস, ঝুঁকি এবং ত্যাগের এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যা বিশ্বকে পর্বতারোহণের চরম চ্যালেঞ্জ এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জীবন-মৃত্যুর কঠিন বাস্তবতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy