বিশেষ: পাখির মতো জীবন-যাত্রা, বহুদূরে গিয়েও আবার ঘরে ফিরে আসে কেন লাল কাঁকড়া?

ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ক্রিসমাস দ্বীপ। অস্ট্রেলিয়ার অধীনে থাকা দ্বীপটির আয়তন ১৩৫ বর্গ কিলোমিটার। সেই দ্বীপের সৈকতের হলুদ বালি আর পাশের পিচ ঢালা রাস্তার রংও এখন লাল। কারণ সেখানে ভিড় করেছে কোটি কোটি কাঁকড়া। ভারত মহাসাগরের নীল জল এখন হয়ে গিয়েছে লাল!
ক্রিসমাস দ্বীপে হাজার দু’য়েক মানুষের পাশাপাশি সেখানে রয়েছে প্রায় ৫ কোটি কোটি লাল কাঁকড়া। তাদের জন্য দ্বীপের এক বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল- ‘ক্রিসমাস আইল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক’ সংরক্ষিত রয়েছে।

ভারত মহাসাগরের ঐ দ্বীপে বর্ষার মৌসুম সাধারণত আসে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে। আর সেই সময় থেকই উপকূলের জঙ্গলে গর্ত খুঁড়ে ডেরা বেঁধে থাকা লাল কাঁকড়ার দল সমুদ্রে পাড়ি দেয়! কারণ, এটি তাদের প্রজননের সময়। কাঁকড়াদের এ বার্ষিক পরিযান দেখতে সে সময় ক্রিসমাস দ্বীপে ভিড় জমান দেশ-বিদেশের পর্যটক আর প্রাণিবিজ্ঞানীরা।

সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে নির্দিষ্ট কিছু পথ ধরে সমুদ্রের তীরে পৌঁছায় কাঁকড়ার দল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রথম সারিতে থাকে পুরুষ কাঁকড়ারা। তারা গিয়ে সৈকতের বালি খুঁড়ে তৈরি করে বাসা। ততক্ষণে পৌঁছে যায় স্ত্রী কাঁকড়ারাও। প্রজননের পরে পুরুষ কাঁকড়ারা ফের জঙ্গলে ফিরে যায়। স্ত্রীরা থেকে যায় আরো কিছুদিন। সমুদ্রের অগভীর জলে ডিম পাড়ার পরে তাদের ছুটি।

তিন-চার সপ্তাহ পরে সেই ডিম ফুটে বের হয়ে ছানা কাঁকড়ারা। এরপর দল বেঁধে জঙ্গলে ফিরতে শুরু করে তারা। সবাই অবশ্য ফিরতে পারে না। পাখি বা সাপেদের খাদ্যে পরিণত হয়। যারা ফেরে তারা গর্ত খুঁড়ে জঙ্গলে বানাতে হয় ডেরা। এরপর শুরু হয় তিন বছরের প্রতীক্ষা। পরিণত হওয়ার পরে আবার এক অক্টোবরের শেষে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর খোঁজে সাগরপারে পাড়ি দেয় কাঁকড়ার দল।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy