সুভাষ চন্দ্র বসু, এক অবিসংবাদিত নেতা, যাঁর জন্মবৃত্তান্ত জানা থাকলেও, তাঁর মৃত্যু আজও এক রহস্য। ২৩শে জানুয়ারি তাঁর জন্মদিন। এই বিশেষ দিনে দেশজুড়ে পালিত হয় নেতাজির জন্মজয়ন্তী, স্মরণ করা হয় ভারতের এই বীর সন্তানকে। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস, একটি অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবন এবং আদর্শ আজও কোটি কোটি ভারতবাসীকে পথ দেখায়।
“তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো” – নেতাজির এই বজ্রনির্ঘোষ আজও প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়ে স্পন্দিত হয়। এই একটি বাক্যই যেন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি তাঁর অদম্য সংকল্প এবং দেশপ্রেমের গভীরতাকে প্রকাশ করে। তবে, এই একটি বাক্যই শুধু নয়, নেতাজির আরও অনেক বাণী আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পথ দেখায়। আসুন, জেনে নেওয়া যাক নেতাজির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উক্তি:
“সবচেয়ে বড় অপরাধ হল অন্যায় সহ্য করা।” – এই উক্তিটি আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উৎসাহিত করে। নেতাজির মতে, কোনো অবস্থাতেই অন্যায়ের সঙ্গে আপস করা উচিত নয়।
“জীবন নিজের উপর বিশ্বাস না রাখলে বৃথা।” – আত্মবিশ্বাসের অপরিসীম গুরুত্বের কথা তিনি এই উক্তিতে তুলে ধরেছেন। নিজের উপর বিশ্বাস রাখলেই যে কোনও কঠিন পরিস্থিতি অতিক্রম করা সম্ভব, এটাই ছিল তাঁর বিশ্বাস।
“আজ আমাদের শুধু একটিই কামনা হওয়া উচিত – মরণপণ করে দেশের জন্য জীবন দেওয়া, যাতে ভারত চিরকাল স্বাধীন থাকতে পারে।” – দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা তৈরীর আহ্বান ছিল তাঁর এই উক্তিতে।
“স্বাধীনতা দেওয়া হয় না, ছিনিয়ে নিতে হয়।” – এই উক্তিটি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। নেতাজি বিশ্বাস করতেন, শুধুমাত্র আত্মত্যাগের মাধ্যমেই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব।
“ব্যর্থতা হলো সাফল্যের একটি স্তম্ভ।” – ব্যর্থতাকে ভয় না পেয়ে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায় এই উক্তি।
নেতাজির এই বাণীগুলি আজও যুবসমাজ থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর আদর্শ, ত্যাগ এবং দেশপ্রেম চিরকাল ভারতবাসীর মনে অক্ষয় হয়ে থাকবে। তাঁর জন্মদিনে, আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর দেখানো পথে চলার সংকল্প গ্রহণ করি।
নেতাজির অমর উক্তি (Inspiring Quotes of Netaji Subhas Chandra Bose)
* ‘সত্যান্বেষণ না করা পর্যন্ত আমরা নীরব হয়ে বসে থাকব না, বা থাকা উচিতও নয়’।
* ‘মানুষ যতদিন বেপরোয়া, ততদিন সে প্রাণবন্ত।’
* ‘স্বাধীনতা দেওয়া হয়না, ছিনিয়ে নিতে হয়।’
* ‘মনে রাখতে হবে যে সবচেয়ে বড় অপরাধ হল অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ।’
* আমাদের যাত্রা যতই ভয়ঙ্কর, বেদনাদায়ক এবং খারাপ হোক না কেন, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে,
* ‘ভারত ডাকছে। রক্ত ডাক দিয়েছে রক্তকে। উঠে দাঁড়াও আমাদের নষ্ট করার মতো সময় নেই। অস্ত্র তোলো!..যদি ভগবান চান , তাহলে আমরা শহিদের মৃত্যু বরণ করব’।
* ‘যদি জীবনে সংগ্রাম, ঝুঁকি না থাকে, তাহলে জীবন বাঁচাটা অনেকটা ফিকে হয়ে যায়।’
* ‘শুধু আলোচনার মাধ্যমে ইতিহাসের কোন আসল পরিবর্তন সাধিত হয়নি।’
* ‘যে সৈনিক মাতৃভূমির প্রতি বিশ্বস্ত, সে সর্বদাই আত্মবলিদান দিতে প্রস্তুত, সে অজেয়’।
* যদি কখনও মাথা নত করতে হয়, বীরের মতো মাথা নত করুন।
* উচ্চ চিন্তা দ্বারা দুর্বলতা দূর হয়। আমাদের সর্বদা উচ্চ চিন্তা তৈরি করা উচিত।
* ‘তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।’
* ‘মানুষ, টাকাকড়ি ,বাহ্যিক আড়ম্বর দিয়ে জয়লাভ বা স্বাধীনতা কেনা যায় না। আমাদের আত্মশক্তি থাকতে হবে, যা সাহসী পদক্ষেপ নিতে উত্সাহ দেবে।’
* ‘ইতিহাসে কোনও বাস্তবিক পরিবর্তন আলোচনার মাধ্যমে করা সম্ভব হয়নি’।
* ‘সংগ্রাম আর ঝুঁকি যদি না থাকে , তাহলে জীবন বেঁচে থাকাই অনেকটা ফিকে হয়ে যায়’।
* ‘নরম মাটিতে জন্মেছে বলেই বাঙালির এমন সরল প্রাণ’।
* ‘আমাদের সবচেয়ে বড় জাতীয় সমস্যা হল, দারিদ্র, অশিক্ষা, রোগ, বৈজ্ঞানিক উত্পাদন। যে সমস্যাগুলির সমাধান হবে, কেবলমাত্র সামাজিকভাবনা চিন্তার দ্বারা।’
* ‘জীবনে প্রগতির আশা নিজেকে ভয়, সন্দেহ থেকে দূরে রাখে এবং তার সমাধানের প্রয়াস চালাতে থাকে’।
* ‘জগতের সব কিছু ক্ষণভঙ্গুর। শুধু একটা জিনিস ভাঙে না, সে বস্তু, ভাব বা আদর্শ।’
* ‘বাস্তব বোঝা কঠিন। তবে জীবনকে সত্যতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সত্যকে গ্রহণ করতে হবে।’
* ‘নিজের প্রতি সত্য হলে বিশ্বমানবের প্রতি কেউ অসত্য হতে পারে না।’
* ‘মনে রাখবেন সবচেয়ে বড় অপরাধ অন্যায় সহ্য করা এবং ভুলের সঙ্গে সমঝোতা করা’।
* ‘কোনও একটা চিন্তনের জন্য একজন মৃত্যুবরণ করতে পারেন। কিন্তু সেই চিন্তনের মৃত্যু হয় না। সেই চিন্তন একজনের মৃত্যুর পর হাজার জনের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।’
* ‘প্রকৃতির সঙ্গ ও শিক্ষা না পাইলে, জীবন মরুলোকে বির্বাসনের মত, সকল রস ও অনুপ্রেরণা হারায়’।