বিশেষ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী রেলস্টেশনটিই এখন বিলাসবহুল হোটেল, জেনেনিন কোথায় এর ঠিকানা?

ফ্রান্সের বার্সেলো হোটেল গ্রুপ চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটির সীমান্ত ঘেঁষা অ্যাগরন উপত্যকায় একটি বিলাসবহুল হোটেলের উদ্বোধন করেছে।
১০০ কক্ষের হোটেলটিতে রয়েছে ৪টি সুইটও।

তুষারাবৃত্ত পিরিনিস পর্বতমালার অসাধারণ দৃশ্যপট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই দৃষ্টিনন্দন হোটেল জানুয়ারিতেই তাদের প্রথম অতিথিকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। এরপরই ভিড় জমেছে পর্যটকদের।

এই হোটেলটি একসময় ছিল একটি রেলস্টেশন। যা সাক্ষী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বহু ঘটনার। গত শতকের সত্তরের দশকে যা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বহু ইতিহাস বুকে নিয়ে সেই পরিত্যক্ত রেলস্টেশনটিই ৪৪ বছর পর জেগে উঠেছে ভিন্ন চেহারায়- একেবারে বিলাসবহুল হোটেল হিসেবে।

হোটেলটির নাম কানফ্র্যাঙ্ক। যা ১৯২৮ সালে এর উদ্বোধন হয়েছিল কানফ্র্যাঙ্ক আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন হিসেবে। উদ্বোধনের দিন উপস্থিত ছিলেন সেই সময়ের স্পেনের সম্রাট সপ্তম ফার্দিনান্দ এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট গ্যাস্তোঁ দুম্যাগ। রেলস্টেশনটির নকশা করেছিলেন স্পেনের স্থপতি ফার্নান্দো রামিরেজ দ্য দমপিয়ের।

র‌্যামন হাভিয়ের ক্যাম্পো ফ্রেইল নামে এক সাংবাদিক সিএনএনকে বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে, ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ সালের মধ্যে নাৎসীদের অত্যাচারে বিপর্যস্ত বহু ইহুদি এই স্টেশন দিয়েই পাড়ি জমিয়েছিলেন পর্তুগালের লিসবন এবং আমেরিকায়’।

সেই দলে ছিলেন মার্ক্স আর্নস্ট এবং মার্ক শাগালের মতো বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী; ছিলেন ফরাসি বংশোদ্ভূত আমেরিকার গায়িকা-অভিনেত্রী জোসেফিন বেকার।

এই স্টেশনটি রেল নেটওয়ার্কের হাব হিসেবে কাজ করেছিল সে সময়। তবে ১৯৪২ সালে নাৎসিদের দখলে চলে যায় কানফ্র্যাঙ্ক পৌরসভা। পরবর্তী দুই বছর, অর্থাৎ ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত এটি জার্মানদের দখলে ছিল। ফলে এই স্টেশন ব্যবহার করে পালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। এমনকি অনেকে জার্মানদের হাতে ধরাও পড়েছিল।

এই স্টেশন দিয়ে স্বর্ণও পাচার করেছিল জার্মানরা। র‌্যামন বলেন, ‘১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত এখান দিয়ে ৮৬ টন সোনা পাচার করেছিলেন নাৎসিরা। এমনই প্রমাণ পেয়েছিলেন স্থানীয় এক বাসচালক’।

সেইসব দিন আজ অতীত। যুদ্ধ শেষেও দীর্ঘদিন চালু ছিল এই স্টেশনটি। তবে সত্তরের দশকে এটি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সংস্কার কাজের পর এটিকে রূপান্তরিত করা হয় হোটেলে। যদিও স্টেশনটির প্রাচীন ঐতিহ্য যথা সম্ভব অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এই হোটেলে অতিথিরা যেমন পাবেন আধুনিক ও আরামদায়ক সেবা, তেমনি পাবেন ইতিহাসের ছোঁয়াও।

কানফ্র্যাঙ্কের এই হোটেলে এখন ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন উত্তর আয়ারল্যন্ডের বেলফাস্টের বাসিন্দা স্থাপত্যবিদ টমাস ও’হেয়ার।

হোটেলের রুমের সংখ্যা তো আগেই বলা হয়েছে। এতে রয়েছে সুইমিং পুল, ওয়েলনেস এরিয়া এবং ৩টি রেস্তোরাঁ। তবে কানফ্র্যাঙ্কের সুইমিং পুলে নামতে হলে গুনতে হবে অতিরিক্ত ১৫ পাউন্ড।

কানফ্র্যাঙ্কের হোটেলের দরজা খোলার আগেই সংস্কারকাজের সময় এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন টমাস। হোটেলের চালুর পর আবার সেখানে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এর বাইরের দিক চোখ ধাঁধানো। এমন একটা ধারণা হয়, যেন অন্য কোনো যুগে পৌঁছে গিয়েছি’।

সূত্র : সিএনএন

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy