বিশেষ: তবে কী পরমাণু বোমাতেই চূড়ান্ত সমাধান দেখছে ইরান? কি বলছে বর্তমান পরিস্থিতি?

ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ চরমে উঠেছে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তেহরান ইসরায়েলের ওপর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যদিও ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরানের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি ছিল সীমিত।

খবরে বলা হয়েছে, ইরানের এই প্রতিশোধমূলক হামলার মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক সংঘাতের নতুন এক অধ্যায় শুরু হলো। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে বৈধ ও ন্যায্য আখ্যা দিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে, হিজবুল্লাহর নেতার মৃত্যুর কথা স্বীকার করে তিনি এটিকে ইরানের জন্য বড় এক আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার পর ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার আকাঙ্ক্ষা আরো জোরালো হতে পারে। কারণ আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য এখন ইরানের বিপক্ষে যাচ্ছে।

মার্কিন বিশ্লেষকদের মতে, হিজবুল্লাহর মতো গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের পতন এবং ইসরায়েলের প্রতি ইরানের সামরিক পদক্ষেপে ব্যর্থতা তেহরানকে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে। বিশেষ করে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অগ্রগতি এবং ইরানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর দুর্বলতা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে আরো এগিয়ে দিচ্ছে। এদিকে, ইসরায়েলও তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে তৎপর হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের পর্যালোচনা অনুসারে, ২০১৮ সালে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করার পর থেকে ইরান পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জনের আরো কাছাকাছি চলে যায়।

বর্তমানে অস্ত্রায়নের দিকে অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও ইরান তার প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে (ডেটার) তার সম্ভাব্য পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার বাড়াতে ইচ্ছুক হতে পারে। এক্ষেত্রে তেহরান ইসরায়েলি নেতাদের মনে এমন বার্তা দিতে চাইছে। তারা যেন ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া জানাতে কয়েক ধাপে চিন্তা করে।

মঙ্গলবারের হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ‘ইরান আজ রাতে একটি বড় ভুল করেছে এবং তারা এর মাশুল দেবে।’

তিনি আরো বলেন, ইরানের সরকার আমাদের (ইসরায়েলের) আত্মরক্ষার অধিকার এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমাদের সংকল্প-সক্ষমতা স্বীকার করতে চায় না।’

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তেল আবিবের আকাশে আলোকিত ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ভিডিওগুলো কয়েকদিন ধরে টানা চালানো হয়। তবে যে ধরনের প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্রগুলো তেহরান আসলে তৈরি করেছে সেগুলো আদতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতে ব্যাপকমাত্রায় ক্ষতি করতে ব্যর্থ।

তেহরানে জুমার নামাজের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রসঙ্গে বলেন, হামলাটি ছিল ‘অসাধারণ’, ‘আইনি’ এবং ‘বৈধ’। কিন্তু তার বক্তব্যে নরম সুরও শোনা যায়। তিনি ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেন। বিশেষ করে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর হত্যা, যাকে তিনি ‘ভাই’ এবং ‘লেবাননের উজ্জ্বল রত্ন’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন।

খামেনি প্রতিশ্রুতি দেন, প্রতিরোধের জন্য ইরানের সমর্থন অটুট ছিল এবং দেশটির মিত্রদের (প্রতিরোধ যোদ্ধাদের) প্রতিরক্ষা বেষ্টনী মজবুত করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ইরান আমাদের দায়িত্ব পালনে দেরি করবে না বা তাড়াহুড়া করবে না।

ইরানের প্রতিরক্ষামূলক আচরণের সুযোগ নেয় ইসরায়েল। গত বছর ধরে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করেছে এবং সম্প্রতি লেবাননের হিজবুল্লাহর ওপর আক্রমণ শাণিত করেছে।

হিজবুল্লাহ, হামাস এবং হুতিসহ ইরাক এবং সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীদের সঙ্গে নিয়ে তৈরি ইরানের ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ মূলত তেহরানকে আঞ্চলিক হুমকি থেকে সুরক্ষিত রাখে।

এ প্রসঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ এবং ওয়াশিংটনের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড আলব্রাইট বলেন, যদি প্রতিরোধের এই অক্ষ কাজ না করে তবে একমাত্র প্রতিরোধ হতে পারে পারমাণবিক প্রতিরোধক।

তিনি বলেন, হামাস এবং হিজবুল্লাহর শক্তি ক্ষয়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধনে ব্যর্থতা এগুলো পরবর্তীতে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে এবং ভাল সুযোগ করে দিয়েছে।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy