
দোলপূর্ণিমার আগের রাতে দেশজুড়ে হোলিকা দহনের আয়োজন হয়, যা বাংলায় ‘ন্যাড়া পোড়া’ নামে পরিচিত। প্রতি বছর ফাল্গুন পূর্ণিমার রাতে এই প্রাচীন ঐতিহ্য পালিত হয়। ২০২৫ সালে হোলিকা দহন অনুষ্ঠিত হবে ১৩ মার্চ রাতে। তবে এবার ভাদ্রকালের উপস্থিতির কারণে শুভ সময় নির্ধারণ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
ন্যাড়া পোড়ার শুভ মুহূর্ত
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, হোলিকা দহনের সময় ভাদ্রকাল এড়ানো জরুরি, কারণ এই সময় শুভ কাজ করা নিষিদ্ধ। এবছর পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে ১৩ মার্চ সকাল ১০:৩৬ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৪ মার্চ দুপুর ১২:২৩ মিনিটে। একই সঙ্গে ভাদ্রকাল শুরু হবে পূর্ণিমার সঙ্গে এবং চলবে রাত ১১:২৬ মিনিট পর্যন্ত। ফলে শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে, ১৩ মার্চ রাত ১১:২৭ মিনিটের পর হোলিকা দহন করাই শ্রেয় বলে জানিয়েছেন পঞ্জিকা বিশেষজ্ঞরা।
পুজোর প্রস্তুতি
ন্যাড়া পোড়ার আগে পুজোর নিয়ম কঠোরভাবে পালন করা হয়। এই পুজোর জন্য বিশেষ উপকরণ নিয়ে হোলিকার স্থানে যেতে হয়। প্রথমে পৃথিবীকে প্রণাম করে জল উৎসর্গ করা হয়। এরপর প্রদীপ জ্বালিয়ে গোবরের খোপ, হলুদ ও কালো তিল অর্পণ করা হয়। হোলিকাকে তিনবার প্রদক্ষিণ করে পবিত্র সুতো বাঁধা হয়। শেষে শুকনো নারকেল উৎসর্গ করে পরিবারের সকলের কপালে তিলক পরানোর মাধ্যমে পুজো সম্পন্ন হয়।
কীভাবে হয় ন্যাড়া পোড়া?
ন্যাড়া পোড়ার জন্য সাধারণত একটি গাছের ডাল মাটিতে পুঁতে তার চারপাশে কাঠ ও গোবরের উপকরণ সাজানো হয়। এরপর আগুন জ্বালিয়ে ছিদ্রযুক্ত গোবরের খোপ, নতুন গমের শীষ এবং অন্যান্য পবিত্র উপকরণ পোড়ানো হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই আগুন অশুভ শক্তি নষ্ট করে এবং মানুষকে সারা বছর সুস্থ রাখে।
ন্যাড়া পোড়ার তাৎপর্য
ধর্মীয় বিশ্বাসে বলা হয়, ন্যাড়া পোড়ার মাধ্যমে রোগ, শত্রু ও অর্থনৈতিক বাধা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া দেবতার কৃপা লাভ এবং জীবনের বিভিন্ন সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়। আগুনে নির্দিষ্ট উপকরণ উৎসর্গ করলে জীবনের প্রতিবন্ধকতা দূর হয় বলে মনে করা হয়। এই ঐতিহ্য শুধু ধর্মীয় নয়, সাংস্কৃতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ।
ভাদ্রের জটিলতা এড়িয়ে শুভ সময়ে পুজো
এবছর ভাদ্রকালের উপস্থিতি কিছুটা জটিলতা তৈরি করলেও শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে শুভ মুহূর্তে পুজো করলে মঙ্গল কামনা সম্ভব। পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১৩ মার্চ রাত ১১:২৭ মিনিটের পর হোলিকা দহন করাই উত্তম। এই সময় ভাদ্রকাল শেষ হবে এবং শুভ মুহূর্ত শুরু হবে। তাই, এই সময়ের পরই ন্যাড়া পোড়ার আয়োজন করার পরামর্শ দিয়েছেন পুরোহিতরা।
দোলের আগের এই রাতে ন্যাড়া পোড়ার মাধ্যমে বাংলার গ্রামে গ্রামে প্রাচীন ঐতিহ্য জাগ্রত হবে। ভাদ্রের ছায়া সত্ত্বেও শুভ সময়ে এই অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে সকলে সুস্থতা ও সমৃদ্ধির প্রার্থনা করবেন।