বিশেষ: এক সময় বাড়িতে ফোন করার জন্য পয়সা ছিল না, জানুন আজ সুন্দর পিচাইয়ের বেতন কত?

১৯৭২ সালের ১২ জুলাই তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইতে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সুন্দর পিচাই, যিনি আজ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তাঁর বাবা রেগুনাথ পিচাই ব্রিটিশ সংস্থা জিইসি-তে চাকরি করতেন। কিন্তু স্বল্প বেতনের কারণে পিচাইদের দু’কামরার ছোট্ট বাড়িতে জীবনযাপন করতে হত। তবে এই সীমাবদ্ধতা কখনোই তাঁর স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন সুন্দর পিচাই। ক্লাসে সবসময় প্রথম হওয়ার গৌরব তাঁর ছিল। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি আইআইটি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ভর্তি হন আইআইটি খড়গপুরে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিনি ছিলেন ব্যাচের টপার। এই সাফল্য তাঁকে উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিতে উৎসাহিত করে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন আইবিএম-এ, যেখানে তিনি প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন।

গুগলের সঙ্গে যাত্রা

২০০৪ সালে সুন্দর পিচাই গুগলে যোগ দেন। এখানে তাঁর দ্রুত উন্নতি শুরু হয়। ২০০৮ সালে তিনি গুগলের সার্চ ইঞ্জিন বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হন। ২০১৫ সালে তিনি গুগলের সিইও পদে অধিষ্ঠিত হন। তাঁর নেতৃত্বে গুগলের অধীনে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী কোম্পানিতে পরিণত হয়। গত বছর তিনি বেতন হিসেবে পেয়েছিলেন ২২৬ মিলিয়ন ডলার, যা ভারতীয় টাকায় প্রতিদিন ৫ কোটি টাকারও বেশি।

সাফল্যের রহস্য

সুন্দর পিচাইয়ের সাফল্যের পিছনে রয়েছে তাঁর মেধা, পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি। প্রতিকূলতা তাঁকে কখনো হতাশ করেনি, বরং আরও উৎসাহিত করেছে। তিনি একজন দক্ষ নেতা এবং তাঁর অধীনস্থ কর্মীদের প্রতি যত্নশীল। তিনি সবসময় তাঁদের উন্নতির জন্য কাজ করেন। পাশাপাশি, তিনি একজন দূরদর্শী উদ্যোক্তা। নতুন প্রযুক্তির প্রতি তাঁর সজাগ দৃষ্টি গুগলকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।

অনুপ্রেরণার উৎস

সুন্দর পিচাই একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী কোম্পানির শীর্ষে পৌঁছেছেন। তাঁর জীবনের গল্প প্রমাণ করে যে, সীমিত সংস্থানের মধ্যেও স্বপ্ন দেখা এবং তা পূরণ করা সম্ভব। তিনি আজ বিশ্বব্যাপী তরুণদের জন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক।

সুন্দর পিচাইয়ের এই যাত্রা আমাদের সকলকে মনে করিয়ে দেয়— শিক্ষা, পরিশ্রম এবং দৃঢ়তার সমন্বয়ে যে কোনো প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব। তাঁর সাফল্য শুধু গুগলের গল্প নয়, বরং একটি জীবন্ত উদাহরণ যা আমাদের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy