বিশেষ: আপৎকালীন অর্থ সঞ্চয় নেই বেশিরভাগ ভারতীয়ের ভাঁড়ারেই, জেনেনিন বিস্তারিত

“আপনার আর্থিক স্বাস্থ্য কতটা ভালো?” – এই প্রশ্নটা শুনলে হয়তো অনেকেই ক্রমবর্ধমান বাজারদরের অজুহাত দেবেন এবং বলবেন যে আর্থিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবার সময়ই নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষার ফলাফল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ওই সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের আর্থিক অবস্থা বা ফিনান্সিয়াল ফিটনেস আসলে খুব ভালো নয়। ২০-এর স্কেলে ভারতীয়দের গড় ফিনান্সিয়াল ফিটনেস স্কোর মাত্র ‘৫.২৯’, যা শতাংশের বিচারে মাত্র ২৬.৪৫%। এই ফলাফল দেশের আর্থিক সচেতনতা এবং প্রস্তুতির এক করুণ চিত্র তুলে ধরেছে।

সমীক্ষাটি কী বলছে? মূল দুর্বলতার ক্ষেত্রগুলি

সমীক্ষাটি ভারতীয়দের আর্থিক সক্ষমতার কয়েকটি মূল দুর্বলতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে:

সঞ্চয় ও জরুরি তহবিল: বহু মানুষ জরুরি পরিস্থিতির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করে রাখেন না। কীভাবে টাকা জমিয়ে রাখতে হয় বা একটি জরুরি তহবিল তৈরি করতে হয়, সে সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই।

বিনিয়োগ জ্ঞান ও অবসরকালীন পরিকল্পনা: কীভাবে টাকা বিনিয়োগ করে সেটিকে বৃদ্ধি করতে হয়, সে বিষয়ে অনেকেরই সঠিক জ্ঞান বা আগ্রহ নেই। একইসঙ্গে, অবসরের পরের জীবনের জন্য বেশিরভাগ মানুষ কোনো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেন না বা যথেষ্ট টাকা সঞ্চয় করেন না, যা ভবিষ্যতে বড়সড় আর্থিক সংকটের কারণ হতে পারে।

ঋণ ও বিমা সুরক্ষা: অনেকের উপর ঋণের বোঝা খুব বেশি, যা তাঁদের ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে। এছাড়া, বহু মানুষ জীবন বিমা বা স্বাস্থ্য বিমার মতো প্রয়োজনীয় বিমা সুরক্ষা গ্রহণ করেন না, যা অপ্রত্যাশিত বিপদের সময় পরিবারকে রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
দুর্বল আর্থিক স্বাস্থ্যের ফলাফল কী হতে পারে?

এই দুর্বল আর্থিক অবস্থার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক ফলাফল থাকতে পারে। আর্থিক সমস্যা সরাসরি মানসিক চাপ বাড়াতে পারে এবং জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দিতে পারে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলো পূরণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, যেমন নিজের বাড়ি কেনা, সন্তানদের ভালো শিক্ষা দেওয়া বা বড় কোনো বিনিয়োগ করা। এছাড়াও, যদি অবসর জীবনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করা না থাকে, তবে বার্ধক্যে চরম আর্থিক অনিশ্চয়তা ও সংকটের মুখে পড়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে।

কীভাবে আপনার আর্থিক স্বাস্থ্য উন্নত করবেন?

তবে এই উদ্বেগজনক অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং নিজের আর্থিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করার কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায় রয়েছে, যা প্রতিটি মানুষ অনুসরণ

করতে পারেন:

আপনার মাসিক আয় এবং খরচের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখুন। একটি বাজেট তৈরি করুন এবং সেই অনুযায়ী চলুন।প্রতি মাসে আপনার আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ (কম হলেও) বাধ্যতামূলকভাবে সঞ্চয় করার চেষ্টা করুন। একটি জরুরি তহবিল তৈরি করুন।

যত দ্রুত সম্ভব আপনার উপর থাকা উচ্চ সুদের ঋণের বোঝা (যেমন ক্রেডিট কার্ড ঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ) পরিশোধ করার চেষ্টা করুন।ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমার মতো প্রয়োজনীয় বিমা গ্রহণ করুন।

আপনার সঞ্চয়কে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করে সেটিকে দীর্ঘমেয়াদে বৃদ্ধি করার চেষ্টা করুন। বিনিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে জেনে তবেই লগ্নি করুন।
পেশাদারী সহায়তা গ্রহণ করুন

আর্থিক পরিকল্পনা করা বা বিনিয়োগের জটিলতা বুঝতে যদি আপনার সমস্যা হয়, তাহলে একজন পেশাদার আর্থিক পরামর্শদাতার সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। সঠিক পরিকল্পনা এবং সচেতনতাই আপনার আর্থিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে পারে। এই সমীক্ষাটি আমাদের সকলকে আমাদের নিজেদের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়ার এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার এক জরুরি বার্তা দিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy