‘বায়োস্কোপ দেখবেননি বায়োস্কোপ …।’ এক সময়ে এ ধরনের শব্দ শুনে ছুটে আসত শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষ। আগেরকার দিনে গ্রাম বাংলার শিশু-কিশোরদের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল এটি। তখন গ্রাম-গঞ্জের হর হামেশা দেখা যেত বাক্সবন্দী বায়োস্কোপ। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ প্রায় হারিয়ে গেছে হাজার বছরের এই ঐতিহ্য।
বায়োস্কোপ মূলত কাঠ ও টিনের তৈরি একটি কাঠের বাক্স। যার ৬টি আয়না যুক্ত চোখ থাকে। সে আয়নাতে চোখ লাগিয়ে গানের তালে ছবি দেখার দৃশ্য খুবই উপভোগ্য। বায়োস্কোপে সর্বোচ্চ ৬ জন একটি প্রদর্শনী উপভোগ করতে পারেন। রিল হিসেবে টিকেট মূল্য নির্ধারিত হয়। প্রদর্শনীর সময়সীমা অনুযায়ী টিকেট মূল্য কম-বেশিও হয়ে থাকে। আবার শহর অঞ্চল-গ্রামাঞ্চল ভেদে প্রদর্শনী মূল্যের তারতম্য আছে। বায়োস্কোপ আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্য বহন করে। বায়োস্কোপে নানা রং-ঢংয়ের মাধ্যমে বর্ণনা দিয়ে একটি দৃশ্যকে বাস্তবে রূপান্তর করতে হয়, যা একটি কষ্টসাধ্য কাজ। প্রকৃতপক্ষে বায়োস্কোপ ছিল গ্রামবাংলার সিনেমা হল।
রং-বেরঙের কাপড় পরে, হাতে ঝুনঝুনি বাজিয়ে বিভিন্ন রকমের আলোচিত ধারা বর্ণনা করতে করতে ছুটে চলত গ্রামের স্কুল কিংবা সরু রাস্তা ধরে। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তার পেছন পেছন বিভোর স্বপ্ন নিয়ে দৌড়াত গ্রামের ছেলেমেয়েরা। বায়োস্কোপওয়ালার এমন ছন্দময় ধারা বর্ণনায় আকর্ষিত হয়ে ঘর ছেড়ে গ্রামের নারী-পুরুষ ছুটে আসত বায়োস্কোপের কাছে। একসঙ্গে সবাই ভিড় জমালেও তিন-চারজনের বেশি একসঙ্গে দেখতে না পারায় অপেক্ষা করতে হতো। সিনেমা হলের মতো এক শো, এরপর আবার আর তিন বা চারজন নিয়ে শুরু হয় বায়োস্কোপ।
আধুনিক প্রযুক্তির দাপটে গ্রাম বাংলার মেলা ও হাট-বাজারে এখন আর বায়োস্কোপের প্রচলন নেই। এক সময়ের জনপ্রিয় এই বায়োস্কোপ এখন বিলুপ্ত। শিশু কিশোররা শুধু বইয়ের পাতায় খুঁজে পেলেও বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই।
লেখক: নিয়ামুর রশিদ শিহাব (ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার ও লেখক)