মানব জীবনের প্রতিদিনের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হলো আগুন। আবার এ আগুনই কখনো কখনো হতে পারে মৃত্যুর কারণ। অসাবধানতার কারণে যেকোনো সময় বাসাবাড়ি কিংবা অফিসে অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। ভয়াবহ এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা আর জীবন বাঁচাতে অবশ্যই কিছু বিষয় সবার মেনে চলা প্রয়োজন।
আবার অনেক সময় আগুন লেগে যাওয়ার পর কিছু ভুলের কারণে আরো বেড়ে যায় হতাহতের সংখ্যা। কঠিন পরিস্থিতিতে তখন বুদ্ধি খাটানো আরো কঠিন হয়ে পড়ে।
জটিল এ পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব মাথা ঠান্ডা রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে হতাহতের সংখ্যা যেমন কমবে, তেমনি বাঁচানো সম্ভব হবে সম্পত্তি ধ্বংসের পরিমাণও। তাই আগুন লাগার পরিস্থিতিতে করণীয় কী আসুন তা একে একে জেনে নিই
১। কারো কথা শুনে বিচলিত না হয়ে প্রথমে বোঝার চেষ্টা করুন সত্যিই আগুন লেগেছে কি না। আগুনের বিস্তৃতি কম থাকলে দ্রুত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করে তা নিভিয়ে ফেলুন। সতর্কতার অংশ হিসেবে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখে রাখুন।
২। বৈদ্যুতিক বা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে না লেগে থাকলে তা নেভানোর জন্য জল ব্যবহার করতে পারেন। তবে বৈদ্যুতিক বা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে আগুন লাগলে তাতে জল দেয়া যাবে না। যে আগুন আপনার পক্ষে নেভানো সম্ভব নয়, তা নেভাতে যাবেন না।
৩। আগুন যদি অনেকটাই ছড়িয়ে যায়, তাহলে নেভানো সহজ না-ও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত ভবন ত্যাগ করুন। কারণ, আগুন ছড়িয়ে পড়লে বের হওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে।
৪। আগুন লেগে গেলে দামি কিছু বাঁচাতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ করবেন না। সবচেয়ে দামি হলো নিজের জীবন। তাই সবার আগে সেটি রক্ষা করতে হবে। তাই নিজে এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা দ্রুত নিরাপদে বের হয়ে আসুন।
৫। আগুন লাগলে যত দ্রুত সম্ভব ফায়ার সার্ভিসে খবর দিতে হবে। আপনার আশপাশের ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন। প্রয়োজনে জরুরি পরিষেবা ৯৯৯-এ কল করুন।
৬। আপনার কাপড়ে আগুন ধরে গেলে ভুলেও দৌড়াবেন না। কারণ, এতে বাতাসে আগুন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই পোশাকে আগুন লাগলে যত দ্রুত সম্ভব মাটিতে শুয়ে পড়ুন। এরপর দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে সামনে-পেছনে গড়াগড়ি করতে থাকুন যতক্ষণ-না আগুন নিভে যায়।
৭। ধোঁয়ার ভেতরে মুখ না ঢেকে বের হতে যাবেন না। হেঁটেও বের হবেন না। যদি পুরো বাড়ি ঘন কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়, তবে নিচু হয়ে বা হামাগুড়ি দিয়ে অথবা গড়াতে গড়াতে বের হতে হবে। মুখ সম্পূর্ণ ঢেকে ধোঁয়ার নিচ দিয়ে বের হয়ে আসতে হবে। নইলে ধোঁয়ার বিষাক্ত গ্যাস চোখে-মুখে ঢুকে গিয়ে বিপদ বাড়তে পারে।
৮। আপনি যদি ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েন, তাহলে ডাস্ট টেপ, ভেজা তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে দরজা ও তার আশপাশের সব ফাঁকা জায়গা ও বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ করে দিন। জানালার বাইরে উজ্জ্বল রঙের কাপড় ঝুলিয়ে দিন এবং নাড়াচাড়া করতে থাকুন যাতে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা বুঝতে পারেন আপনি ভেতরে আছেন।
৯। বৈদ্যুতিক আগুনের ক্ষেত্রে দ্রুত মেইন সুইচ বন্ধ করুন।
১০। তেলজাতীয় পদার্থ ও জল বৈদ্যুতিক আগুন নেভাতে ব্যবহার করবেন না।
১১। সিঁড়িতে ধোঁয়া দেখতে পেলে ওপরে উঠবেন না, ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
১২। সিঁড়ি দিয়ে নামা বিপজ্জনক হলে বারান্দা বা জানালার কাছে চলে যান, এতে হাতে বেশি সময় পাওয়া যায়।
১৩। আগুন যদি আপনার রান্নাঘরের তেল বা গ্রিজ থেকে সৃষ্টি হয়, তাহলে তার ওপর বেকিং সোডা বা লবণ ঢেলে দেয়ার চেষ্টা করুন। এটা যদি রান্না করার পাত্রে সূত্রপাত হয়, তাহলে তা ঢাকনা দিয়ে দ্রুত ঢেকে দিন। জ্বলতে থাকা কড়াইয়ে জল ঢালবেন না বা ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করবেন না।
১৪। আগুন না নেভা পর্যন্ত বাড়ির ভেতর আবার ঢোকার চেষ্টা করবেন না। সামান্য আহত হলেও চিকিৎসা নিতে অবহেলা করবেন না। তাই আহত হয়ে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে তখনই।
১৫। বিপদে কিছুক্ষণ পরপর একে অপরকে সাহস দিলে বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই আগুন লাগার পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পরিবারের সদস্য বা বন্ধুরা দলছুট হবেন না।