
আলিপুরদুয়ারে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে সেনাবাহিনীর সাফল্যকে ‘সিঁদুরের শক্তি’ হিসেবে তুলে ধরেছেন, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং মোদীর ব্যক্তিগত জীবন টেনে আক্রমণ করেছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হুগলির চুঁচুড়ায় বিজেপির মহিলা কর্মীরা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পুলিশকে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়ার মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে।
মোদী যা বলেছিলেন:
আলিপুরদুয়ারের জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল তারপর পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যেও অনেক ক্ষোভ জন্মেছিল। সন্ত্রাসবাদীরা আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দেওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছিল। আমাদের সেনারা সিঁদুরের শক্তি দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা ওই আতঙ্কবাদীদের মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি যেটা পাকিস্তান কল্পনাও করতে পারেনি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা আক্রমণ:
প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সাংবাদিক বৈঠকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “অপারেশন সিঁদুর নাম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে এবিষয়ে এখনি কিছু বলব না। বিজেপি বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা যখন দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছে, তখন নির্বাচনী রং লাগিয়ে রাজনীতির হোলি খেলতে এসেছেন বিজেপিরই লোক। আগে চাওয়ালা, তারপর চৌকিদার, আর এখন বলছেন সিঁদুর বেচবেন। মা, বোনের সিঁদুর এভাবে বেচা যায় না। প্রত্যেক মহিলা তাঁর স্বামীর হাত থেকে সিঁদুর নেন। এমনভাবে বলছেন মোদি যেন আপনি সকলের স্বামী। মোদি কেন নিজের স্ত্রীকে সিঁদুর পরাচ্ছেন না?”
বিজেপির প্রতিবাদ ও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি:
বিজেপির অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের মাধ্যমে বিবাহিত মহিলাদের সিঁদুরের অপমান করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে আজ হুগলির চুঁচুড়ার পিপুলপাতি পাঁচমাথা মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান মহিলা বিজেপি কর্মীরা। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং রাস্তায় বসে থাকা বিজেপি মহিলা কর্মীদের সরানোর চেষ্টা করে।
এই সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ উঠেছে, বিজেপি মহিলা কর্মীরা জোর করে মহিলা পুলিশকর্মীদের সিঁদুর পরিয়ে দেন। কপালে এবং গালে সিঁদুর ঘষে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মহিলা পুলিশকর্মীরা বাধা দিলে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। বিজেপি কর্মী নিরুপা চক্রবর্তী বলেন, “সিঁদুর আমাদের অহঙ্কার। আমি নিজে সিঁদুর পরব। বিবাহিত মহিলাদেরও সিঁদুর পড়াব।” কিছুক্ষণের মধ্যে অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।