
তামিলনাড়ু সরকার ২০২৫-২৬ সালের রাজ্য বাজেটের প্রচারমূলক সামগ্রীতে ভারতীয় রুপির প্রতীক ‘₹’ বাদ দিয়ে তার জায়গায় তামিল অক্ষর ‘ரூ’ ব্যবহার করেছে। এই বাজেট আগামী শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকালে রাজ্য বিধানসভায় উপস্থাপিত হবে। গত বছরের বাজেটের পোস্টারে রুপির চিহ্ন ব্যবহার করা হলেও এবার তা পরিবর্তন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্তালিন নিজের এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে নতুন লোগোটি শেয়ার করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
এই পরিবর্তন এমন এক সময়ে এসেছে, যখন রাজ্যের শাসক দল দ্রাবিড় মুন্নেত্র কঝগম (ডিএমকে) বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির (এনইপি) তিন ভাষার ফর্মুলা নিয়ে তীব্র বিরোধে জড়িয়েছে। তামিলনাড়ু সরকার এই পরিবর্তন নিয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে ডিএমকে নেতা সরবনান আনন্দন এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এতে কোনো অবৈধতা নেই, এটি কোনো ‘শোডাউন’ নয়। আমরা তামিল ভাষাকে অগ্রাধিকার দিই, তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
বিজেপির তীব্র প্রতিক্রিয়া
বিজেপি এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে। দলের রাজ্য মুখপাত্র নারায়ণন তিরুপতি এনডিটিভিকে বলেন, “এই পদক্ষেপ দিয়ে ডিএমকে যেন বলতে চাইছে তারা ভারত থেকে আলাদা। এটি তাদের ব্যর্থতা থেকে মনোযোগ সরানোর একটি চেষ্টা।” বিজেপির রাজ্য প্রধান কে অন্নামালাই মুখ্যমন্ত্রী স্তালিনকে ‘মূর্খ’ বলে আক্রমণ করেছেন। এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, “রুপির চিহ্নটি ডিএমকের এক প্রাক্তন বিধায়কের ছেলে উদয় কুমার ডিজাইন করেছিলেন। তামিলনাড়ুর এই গর্বকে অস্বীকার করে স্তালিন কতটা মূর্খ হতে পারেন?” অন্নামালাই তিন ভাষার ফর্মুলার পক্ষে রাজ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিজেপির প্রবীণ নেতা ও প্রাক্তন রাজ্যপাল তামিলিসাই সৌন্দরাজনও ডিএমকে-র কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই পরিবর্তন সংবিধানের বিরুদ্ধে। ডিএমকে জাতীয় স্বার্থের বিরোধিতা করছে। তাদের বর্ণমালা পরিবর্তনের বদলে মৌলিক বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেওয়া উচিত।” তিনি স্তালিনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, “তিনি যেন তাঁর নামের তামিল বিকল্প ব্যবহার করেন।”
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিতর্ক
এই প্রতীক পরিবর্তন এমন সময়ে এসেছে যখন তামিলনাড়ু ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই নির্বাচনে ডিএমকে ও এআইএডিএমকে-র মধ্যে তীব্র লড়াই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিজেপি, যারা তামিলনাড়ুতে এখনও উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রভাব গড়ে তুলতে পারেনি, পিছন থেকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিজেপি অভিযোগ করেছে, ডিএমকে তামিল ভাষার প্রচারে কিছুই করেনি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সম্প্রতি দ্রাবিড় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইভি পেরিয়ারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “তিনি তামিল ভাষাকে ‘বর্বর ভাষা’ বলেছিলেন। ডিএমকে কেন তাঁর আদর্শ মেনে তামিলের রক্ষক হওয়ার দাবি করে?”
তামিল গর্ব না কি রাজনৈতিক চাল?
রুপির চিহ্ন ‘₹’ ২০১০ সালে উদয় কুমার নামে এক তামিল ডিজাইনার তৈরি করেছিলেন, যিনি ডিএমকে-র প্রাক্তন বিধায়ক এন ধর্মলিঙ্গমের ছেলে। এই চিহ্নটি দেবনাগরী ‘র’ এবং রোমান ‘R’-এর সমন্বয়ে গঠিত, যা ভারতের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। ডিএমকে-র এই পদক্ষেপকে অনেকে তামিল সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি গর্বের প্রকাশ হিসেবে দেখলেও, বিজেপি এটিকে জাতীয় ঐক্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করেছে।
এই ঘটনা তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে চলমান বিতর্ককে আরও জোরালো করেছে। রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে এই বিরোধ আগামী দিনে আরও তীব্র হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে এই পরিবর্তন কেবল প্রতীকী নাকি গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে, তা সময়ই বলবে।
সূত্র: এনডিটিভি