
একুশে জুলাইয়ের রণকৌশল স্থির করতে কলকাতায় দলের শীর্ষ নেতাদের কড়া সতর্কবার্তার রেশ কাটতে না কাটতেই বীরভূমের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। এবার মাঠ দখল করেছে অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)। তৃণমূলের দুই প্রভাবশালী নেতা, অনুব্রত মণ্ডল এবং কাজল শেখের অনুগামীরা AI-এর মাধ্যমে তাঁদের ‘দাদা’দের ‘বাঘ’ এবং ‘সিংহ’ রূপে উপস্থাপন করে এক অভিনব দ্বৈরথ শুরু করেছেন, যা দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
নেতৃত্বের সতর্কতা, অনুগামীদের অবজ্ঞা
কয়েকদিন আগে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি বৈঠকে যোগ দিতে অনুব্রত ও কাজল কলকাতায় এসেছিলেন। সেখানে ফিরহাদ হাকিম সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা তাঁদের আলাদা করে ডেকে দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে সৃষ্ট কষ্টকর পরিস্থিতি নিয়ে কড়া বার্তা দেন। দলের মধ্যে আরও বেশি একতা ও সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। বিশেষত, অনুব্রত মণ্ডল (কেষ্টদা) এবং কাজল শেখের মধ্যে চলমান গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দলের শৃঙ্খলাকে বিপদে ফেলতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে কেষ্টদাকে ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’ও দেওয়া হয়।
কিন্তু সেই সতর্কবার্তায় নেতাদের মধ্যে কতটা প্রভাব পড়েছে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঠিক সেই সময়েই, বীরভূমের রাজনৈতিক আঙিনায় শুরু হয় এই নতুন ‘AI রণক্ষেত্র’। যখন দল থেকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে একত্রে কাজ করার বার্তা দেওয়া হচ্ছে, তখনই অনুগামীরা তাদের প্রিয় নেতাদের মহিমান্বিত করতে এই নতুন হাতিয়ার ব্যবহার করছেন।
AI-এর ক্যানভাসে ‘বাঘ’ অনুব্রত, ‘সিংহ’ কাজল
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা দুটি ভিডিও বা ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। একটিতে অনুব্রত মণ্ডলকে এক রাজকীয় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে এবং অন্যটিতে কাজল শেখকে এক বিক্রমী সিংহের সাথে দেখানো হয়েছে। এই প্রতীকী উপস্থাপনা দ্রুতই অনুগামীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
কাজল শেখের অনুগামী মীর রাজ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “কাজল শেখ যেভাবে উন্নয়নমূলক কাজ করছে, জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সেভাবে বিরোধীদের মোকাবিলা করছে, তাতে তাঁর জন্য সিংহের মতো গর্জন করা কোনো বিষয় নয়। তিনি আমাদের কাছে সত্যিই সিংহ।” অন্যদিকে, অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী আমিনুল ইসলাম বলেন, “বীরভূমের মানুষের কাছে কেষ্টদা বাঘের মতো। সবাই তাঁকে ভালোবাসে এবং তাঁকে বাঘের মতো সম্মান দেয়।”
একতা বনাম বিভাজন: ছাব্বিশের ভোটের চালচিত্র
এই ধরনের অনুগামীদের কীর্তি কি দলের একতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করবে? নাকি এর মাধ্যমে দলের ভিতরে আরও বেশি বিভাজন তৈরি হবে? এই প্রশ্নই এখন রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। অনুগামীদের এই সিংহ-বাঘের লড়াই বীরভূমের রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়াচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এটি দলের জন্য ফায়দা এনে দেবে, নাকি একমাত্র ক্ষতিই করবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যখন ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন, তখন অনুগামীদের এই ধরনের উত্তেজক কার্যকলাপ কি দলের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করবে? রাজনীতির এই গরম তাপমাত্রা বাড়ছে। সিংহ-বাঘের এই প্রতীকি লড়াই ঠিক কতটা প্রয়োজনীয় বা যুক্তিযুক্ত, তা হয়তো ভবিষ্যতের নির্বাচনই প্রমাণ করবে। তবে এখনকার রাজনৈতিক অবস্থা এবং অনুগামীদের রোষের মধ্যে, দলের আসল উদ্দেশ্য কতটা বাস্তবায়িত হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।