বাংলাদেশে গণহত্যায় দোষী জামাত নেতাকে জেল থেকে মুক্তির নির্দেশ, খারিজ করা হলো মৃত্যুদণ্ড

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার এক যুগান্তকারী রায়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থেকে জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রাফাত আহমেদের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের সাত সদস্যের বেঞ্চ রায় প্রদানের সময় স্পষ্ট করে জানিয়েছে, “এটিএম আজহারুল ইসলাম সকল অভিযোগ থেকে খালাস পেলেন।”

এই রায়ের ফলে আজহারুল ইসলামের মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়েছে, যদি না অন্য কোনো মামলায় তিনি আটক থাকেন। সরকারি আইনজীবী নিশ্চিত করেছেন যে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং এর বিরুদ্ধে কোনো উচ্চতর আদালত বা আন্তর্জাতিক ফোরামে আপিলের সুযোগ নেই।

৭৩ বছর বয়সী আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন এবং গণহত্যা, হত্যা ও ধর্ষণের মতো গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ছিল। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সেই রায় বহাল রাখে। এরপর ২০২০ সালে আজহারুল ইসলাম ১৪টি আইনি কারণ দেখিয়ে পুনর্বিবেচনা আবেদন দাখিল করেন, যার ফলস্বরূপ এই রায় এসেছে।

এই রায়কে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রাক্তন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের ফল, যা ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছিল। অধ্যাপক নজরুল সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “ন্যায়বিচারের এই নতুন সম্ভাবনার কৃতিত্ব জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের নেতৃত্বকে।”

২০০৯ সালে, বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তানি সামরিক সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করে। এই প্রক্রিয়ার অধীনে জামায়াতে ইসলামীর ছয়জন সিনিয়র নেতা এবং একজন বিএনপি নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। আজহারুল ইসলামের আইনজীবী শিশির মনির এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমার মক্কেল ভাগ্যবান যে জীবিত থাকাকালীন তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। বাকি পাঁচ নেতার ইতিমধ্যেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার কিছু সদস্যও গত বছরের গণবিরোধী দমন-পীড়নের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একই ট্রাইব্যুনালের তদন্তাধীন রয়েছেন। এই রায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy