বাংলাদেশি মেয়েদের চাকরির প্রলোভনে ভারতে পাচার, হায়দরাবাদে চক্রের পর্দাফাঁস করল ইডি

ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে মেয়েদের ভারতে পাচার করা হতো এবং এই অবৈধ কাজের জন্য এজেন্টদের মাথাপিছু ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা দেওয়া হতো। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হায়দরাবাদে পতিতাবৃত্তি সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্তে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু দালালকে ব্যবহার করে হায়দরাবাদের একটি চক্র এই পাচারের কাজ চালাত। ইডি তাদের বিবৃতিতে দাবি করেছে, এই চক্রটি মূলত বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত হতো।

তদন্তে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
ইডি জানিয়েছে, তেলঙ্গানা পুলিশ প্রথমে হায়দরাবাদ ও তার সংলগ্ন এলাকায় পতিতাবৃত্তির অভিযোগে দুটি পৃথক এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। এরপর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ইডি এই মামলায় তদন্তে নামে। পরবর্তী সময়ে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-ও তদন্তে যোগ দেয়। তদন্তে উঠে আসে, গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি নাগরিক, যারা ভুয়ো নথি ব্যবহার করে ভারতে বসবাস করছিলেন। এমনকি একাধিক গ্রেপ্তারের পরও এই চক্রটি সক্রিয় ছিল।

ইডির তদন্তে আরও প্রকাশ পেয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মেয়েদের পাচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকাকে প্রধান পথ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। জামাকাপড় সেলাইয়ের দোকান, বিউটি পার্লার, ইস্পাত কারখানা, পরিচারিকার কাজের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশি বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের হায়দরাবাদে নিয়ে যাওয়া হতো। পরে তাদের জোর করে পতিতাবৃত্তিতে নামতে বাধ্য করা হতো।

সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও আইনি পদক্ষেপ
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ইডি জানায়, এই মামলায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পরে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে সংস্থাটি জানায়, তদন্তে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু এজেন্টের সন্ধান মিলেছে। এই এজেন্টরা আর্থিক লেনদেনের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অনলাইন ওয়ালেট ব্যবহার করতেন। পাচারের জন্য প্রতি মেয়ের জন্য সীমান্তে সক্রিয় দালালদের ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা দেওয়া হতো, যা পাচারের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হতো।

ইডি আরও জানিয়েছে, লেনদেনের ক্ষেত্রে নগদ টাকার পাশাপাশি ছোট ছোট অংকে ভাগ করে টাকা পাঠানো হতো, যাতে তদন্তকারী সংস্থা বা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ এড়ানো যায়। এমনকি বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর জন্য ‘বিকাশ’ নামক মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবাও ব্যবহার করা হতো।

আইনি শাস্তি ও চলমান তদন্ত
এই মামলায় এনআইএ বিশেষ আদালত ইতোমধ্যে একটি এফআইআরে ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেছে। ইডি জানিয়েছে, তদন্তে এখনও পর্যন্ত উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে এই চক্রের আরও সদস্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মানবপাচারের একটি বড় নেটওয়ার্কের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলোর দাবি, এই চক্রটি বন্ধ করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই ঘটনায় সীমান্ত নিরাপত্তা এবং মানবপাচার রোধে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy