
পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশে যাত্রীবোঝাই একটি ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনায় উত্তেজনা চরমে উঠেছে। বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (BLA)-র বিদ্রোহীরা জাফর এক্সপ্রেস নামে ট্রেনটি ছিনতাই করে চিন ও পাকিস্তান সরকারকে সরাসরি হুমকি দিয়েছে। BLA-র তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যদি প্রাণে বাঁচতে চাও, তাহলে বালুচিস্তান ছেড়ে চলে যাও।” ঘটনার ১৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পাকিস্তান সেনা এখনও পুরোপুরি সাফল্য পায়নি।
ট্রেনে ৫০০ যাত্রী পণবন্দি
পাক রেল দফতরের আধিকারিক মহম্মদ কাশিফ জানিয়েছেন, নয় কোচবিশিষ্ট জাফর এক্সপ্রেসে প্রায় ৫০০ যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ১০০-র বেশি যাত্রী এখনও BLA বিদ্রোহীদের হাতে পণবন্দি রয়েছেন। উদ্ধার অভিযানে এ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১০৪ জনকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে এই অভিযানে সেনার একাধিক জওয়ান নিহত হয়েছেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, ট্রেনে থাকা অন্তত ছয়জন পাক সেনাকর্মী বিদ্রোহীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে, উদ্ধার অভিযানে ১৬ জন BLA বিদ্রোহী নিহত হয়েছে।
পাক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই ঘটনাকে “জঙ্গিদের নৃশংস হামলা” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “বালুচিস্তানের যে এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে, সেটি পাহাড়ে ঘেরা একটি দুর্গম অঞ্চল। তবুও আমাদের সেনার মনোবল অটুট। আমরা শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনব।”
BLA-র দাবি ও হুমকি
BLA তাদের বিবৃতিতে ঘটনার দায় স্বীকার করে জানিয়েছে, শতাধিক যাত্রীকে পণবন্দি করা হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান থেকে বালুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের অন্যতম দাবি, বালুচিস্তানে পাকিস্তান সরকার বা নিরাপত্তা বাহিনীর কোনও প্রতিনিধি থাকা উচিত নয়। এছাড়া, চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC) প্রকল্পের মাধ্যমে বালুচিস্তানের খনিজ সম্পদ শোষণ ও স্থানীয়দের বাস্তুচ্যুত করার অভিযোগ তুলে তারা এই প্রকল্প বন্ধের দাবি করছে।
বালুচিস্তানের অস্থিরতা
বালুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে অশান্ত প্রদেশ হিসেবে পরিচিত। ১৯৪৮ সাল থেকে এখানে বালুচ জনগণ ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিনের বর্ধিত উপস্থিতি এই অঞ্চলের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। CPEC-র আওতায় চিন এখানে বড় বড় প্রকল্পে কাজ করছে, যা বালুচ বিদ্রোহীদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। BLA গত কয়েক বছরে চিনা প্রযুক্তিবিদ, পাক কূটনীতিক ও সেনাকর্মীদের উপর বারবার হামলা চালিয়েছে।
চলমান সংকট
১৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও জাফর এক্সপ্রেসের পণবন্দি যাত্রীদের ভাগ্য এখনও অনিশ্চিত। পাকিস্তান সেনা ও BLA-র মধ্যে এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি হলেও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আন্তর্জাতিক মহল এই ঘটনার দিকে নজর রেখেছে, কারণ এটি বালুচিস্তানে চিন ও পাকিস্তানের যৌথ প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
বালুচিস্তানের এই সংকট কীভাবে সমাধান হবে, তা এখন সময়ের অপেক্ষা। তবে BLA-র এই হামলা ফের একবার প্রমাণ করল, এই অঞ্চলের অস্থিরতা দূর করা পাকিস্তানের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং।