বর্ষার প্রথম ধাক্কা! উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথ, পাহাড়ে যেতে প্রশাসনের বাধা

বুধবার থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের পাহাড়ি জনজীবন। একটানা বৃষ্টির জেরে বিভিন্ন স্থানে নেমেছে ধস, যার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে সিকিমের মল্লি থেকে নামচি যাওয়ার প্রধান সড়ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাস্তা মেরামত না হওয়া পর্যন্ত এই রুটে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।

তিস্তার গর্ভে রাস্তা, জাতীয় সড়কে একমুখী ট্রাফিক

শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কও বর্ষার রোষানল থেকে রেহাই পায়নি। এই সড়কের একাধিক অংশে ছোটখাটো ধস নেমেছে। অন্যদিকে, তিস্তার জলস্তর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় নদীর রুদ্ররূপ বারবার আছড়ে পড়ছে রাস্তার ধারে। এর ফলে সড়কের কিছু অংশ ভেঙে সরাসরি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের অনেক জায়গায় এখন একমুখী ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, যা যানজট এবং ধীর গতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত পথ, পণ্যবাহী ট্রাক উল্টে গেল

টানা বৃষ্টির জেরে পাহাড়ি রাস্তাগুলোর পিচ উঠে গিয়ে কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। বুধবার গভীর রাতে এমনই এক কর্দমাক্ত রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পণ্যবাহী ট্রাক উল্টে যায়। বর্ষা শুরু হতেই পাহাড়ি রাস্তাগুলোর এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রশাসন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস: সতর্কতার বার্তা

প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। যাত্রী ও পর্যটকদের অপ্রয়োজনে পাহাড়মুখো ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ ও আগামীকাল উত্তরবঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি রয়েছে। শুক্রবার ও শনিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা কিছুটা কম থাকলেও, রবিবার দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলায় ফের বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।

বৃহস্পতিবার দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার এবং উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি জেলাতে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বাড়বে এবং ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি থাকবে। কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝড়ো বাতাস বইবে। সোমবার দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কিছু অংশে ভারী বৃষ্টির পরিমাণ ও ব্যাপকতা আরও বাড়বে বলে জানানো হয়েছে।

পর্যটন এবং স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করেছে। তবে বর্ষার এই প্রাথমিক ধাক্কা উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy