
কলকাতার মেয়র ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি এবং মেয়েদের পোশাক নিয়ে বিজয়বর্গীয়ের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বিজেপি-কে নারীবিদ্বেষী এবং বিভাজন সৃষ্টিকারী শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ফিরহাদ হাকিম প্রধানমন্ত্রী মোদীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের জীবন দিয়ে, তাদের ক্ষমতা দিয়ে পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এখানে মহান কিছু করেননি। বরং, একটি বৃহৎ দেশের ভয়ে কাপুরুষের মতো সেনাবাহিনীকে থামানো হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি। আমাদের সেনাবাহিনী ভারতের সম্মান রক্ষা করেছে। আমরা আজ তাদের স্যালুট জানাচ্ছি।” এই মন্তব্য করে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, কোনো তৃতীয় দেশের চাপে ভারত পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে, যা দেশের সামরিক শক্তির প্রতি অবিচার।
সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি মেয়েদের ছোট পোশাক পরা পছন্দ করেন না এবং পশ্চিমী সংস্কৃতি ও ভাবধারার সঙ্গে একমত নন। তিনি এমনকি ছোট পোশাকে আসা মেয়েদের সঙ্গে সেলফি তুলতে অস্বীকার করেন বলে জানান। যদিও তিনি মেয়েদের ‘দেবী’-র মতো দেখেন বলেও দাবি করেন।
এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আসলে, বিজেপি দল নিজেই একটি নারীবিদ্বেষী। স্বাধীনতা। নারীরা স্বাধীনতা বোঝে না। তুমি এটা পরবে না, ওটা পরবে না। এটা ওটা খেও না। এটা ভারত। ভারতের মানুষ এই বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেখবে না, ভারতের মানুষ শুনবে না। নারীরাও শুনবেন না।” তিনি আরও যোগ করেন, “নারীরা আমাদের বাংলায় দুর্গার রূপ। তাঁদের অপমান করা যাবে না। তোমাদের নিজের মনে ময়লা এবং অবিচার আছে। নারী স্বাধীনতা মানে স্বাধীনতা। আমি যেমন তোমাকে বলতে পারি না, তুমিও কাউকে বলতে পারো না।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে ফিরহাদ নারী স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন।
ফিরহাদ হাকিম তার বক্তব্যে ধর্মীয় সম্প্রীতির উপরও জোর দেন এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে ‘হিন্দুত্বের প্রসঙ্গ তুলে ভোট’ করার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, “আমরা সকল ধর্মের সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। প্রকৃত হিন্দুরা অন্যের ধর্মকে সেভাবেই সম্মান করে। তাই হিন্দুত্বের প্রসঙ্গ তুলে ভোট হয় না।” নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি মসজিদে প্রার্থনা করি, আমাদের দুর্গাপুজো তার পাশেই অনুষ্ঠিত হয়। এটি আমাদের সকল ধর্মের সম্প্রীতির হিন্দুস্তান। এটি বাংলা। এখানে কোনও বিভেদ ও শাসন নেই। এটি শ্রীচৈতন্যদেবের স্থান। যেখানে আমরা সবাই একসঙ্গে ভালবাসা ভাগ করে নিই। কোনও ঘৃণা নেই।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বাংলার চিরাচরিত সম্প্রীতির ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন এবং বিজেপি-র বিভেদের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ফিরহাদ হাকিমের এই বক্তব্যগুলি রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে যখন দেশজুড়ে জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি চলছে, তখন তার এই কঠোর সমালোচনা রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উসকে দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।