
কর্নাটকের গদগ জেলায় এক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড উন্মোচিত হয়েছে, যা সম্পর্কের অন্ধকার দিক এবং অপরাধীর নিঠুরতা সামনে এনেছে। ছয় বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ের চাপ দেওয়ায় নিজের প্রেমিকাকে খুন করে মৃতদেহ পুঁতে ফেলল প্রেমিক। ছয় মাস ধরে নিখোঁজ থাকা এক তরুণীর রহস্যময় অন্তর্ধানের কিনারা করল পুলিশ, পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে এল এই নির্মম সত্য।
নিহত তরুণীর নাম মধুশ্রী অঙ্গাদি, তিনি গদগ তালুকের নারায়ণপুরা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। অভিযুক্ত প্রেমিক সতীশ হিরেমঠও একই গ্রামের বাসিন্দা। জানা গিয়েছে, মধুশ্রী ও সতীশের মধ্যে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের এই সম্পর্কের কথা পরিবারের কাছেও অজানা ছিল না। তবে বিয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই পরিস্থিতি এক ভয়ঙ্কর মোড় নেয়। মধুশ্রী বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করায় সতীশ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে, যখন মধুশ্রী তার আত্মীয়দের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। তার পরিবার সম্পর্ক থেকে দূরে রাখার জন্য তাকে শহরে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ঘটনার দিন রাতেই সতীশ তাকে ডেকে নেয় গ্রামের পাশের একটি খামারবাড়িতে। পুলিশি তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, সেখানেই বিয়ের প্রসঙ্গ ঘিরে তাদের মধ্যে তীব্র বচসা শুরু হয়। মধুশ্রী যখন সতীশের উপর বিয়ের জন্য জোর করতে থাকে, তখন সতীশ রাগের বশে মধুশ্রীর গলায় ঘোমটা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে খুন করে।
হত্যাকাণ্ডের পর আত্মগোপনের জন্য সতীশ একটি সুপরিকল্পিত জাল বোনে। সে মধুশ্রীর মৃতদেহ নদীর ধারে একটি নির্জন স্থানে পুঁতে দেয়। প্রমাণ লোপাটের জন্য সে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যায়, একটি পেট্রোল পাম্পে কাজ করতে থাকে এবং মাঝেমধ্যে ফিরে এসে দেহাবশেষ স্থানান্তর করার চেষ্টা করে, যাতে কেউ তার খোঁজ না পায়।
তবে প্রযুক্তির কাছে সতীশের এই চালাকি ধরা পড়ে যায়। মধুশ্রীর ফোনের সর্বশেষ টাওয়ার লোকেশন সতীশের দেওয়া বয়ানের সঙ্গে মেলেনি। পুলিশের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। শেষমেশ কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সতীশ ভেঙে পড়ে এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেয়।
পুলিশের তত্ত্বাবধানে খোঁড়া জায়গা থেকে বেশ কিছু কঙ্কালের অংশ উদ্ধার হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত মধুশ্রীর খুলি পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক টিম উদ্ধার হওয়া দেহাবশেষ সঠিকভাবে শনাক্ত করার জন্য এবং মামলার আরও গভীরে যাওয়ার জন্য তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ঘটনা আবারও সম্পর্কের জটিলতা এবং অন্ধকারের দিকে এক ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত দিল। পাশাপাশি, পুলিশের নিবিড় তদন্ত ও প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের চিহ্নিত করার গুরুত্বও তুলে ধরল।