প্রাইভেট হাসপাতালে বিল নিয়ে আর নেই চিন্তা, রাজ্য সরকার পেশ করল নতুন আইন! জেনেনিন

অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে সুস্থ হয়ে ফেরা তো দূরের কথা, অনেক সময়েই ‘অতিরিক্ত বিল’-এর চাপে রোগীর পরিবারকে নাজেহাল হতে হয়। অপারেশন বা সাধারণ চিকিৎসার জন্য পূর্বে নির্ধারিত প্যাকেজের বাইরে হাজার হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচের অভিযোগ আজ আর নতুন কিছু নয়। এবার এই অনিয়ন্ত্রিত দৌরাত্ম্যে লাগাম টানতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার বিধানসভায় পেশ করল ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট (রেগুলেশন) সংশোধনী বিল, ২০২৫।

নতুন এই বিলে আপনার লাভ কী?

প্যাকেজের বাইরে খরচ? আগে লিখিত অনুমতি নিতে হবে:
আপনার প্রিয়জনকে কোনো বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করালে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুরুতেই একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্যাকেজের কথা জানাবে। সেই প্যাকেজের বাইরে যদি কোনো কারণে খরচ বাড়ে, তবে হাসপাতালকে অবশ্যই লিখিতভাবে আপনাকে জানাতে হবে এবং আপনার লিখিত সম্মতি নিতে হবে। এর ফলে অপ্রত্যাশিত বিলের ধাক্কা থেকে রোগীর পরিবার রক্ষা পাবে।

বাড়তি খরচ হলে চাইতে পারবেন হিসেব:
যদি প্যাকেজ ছাড়িয়ে চিকিৎসা চলে, তাহলে তার জন্য হাসপাতালকে একটি স্পষ্ট, বিস্তারিত বিল দিতে হবে, যার সঙ্গে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাও অবশ্যই থাকতে হবে। এর মাধ্যমে রোগীর পরিবার প্রতিটি খরচের সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে পারবে।

আইনের আওতা:
এই সংশোধনী আইনে পরিণত হলে রাজ্যের সমস্ত নথিভুক্ত বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার এই নতুন নিয়মের মধ্যে পড়বে। ফলে চিকিৎসা সেবার মান এবং স্বচ্ছতা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

আইন না মানলে কঠোর ব্যবস্থা:
রাজ্য সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, এই আইন না মানলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেন এই বিল জরুরি?

অতিরিক্ত বিল চাপিয়ে দেওয়া: অনেক সময়ই হাসপাতাল ছোটখাটো অপারেশন বা ডেঙ্গুর মতো নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার জন্য একটি প্যাকেজ জানায়, কিন্তু পরে নানা অজুহাতে বিল অনেকটা বাড়িয়ে ফেলে, যা রোগীর পরিবারের উপর অযাচিত আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দেয়।
বাড়তি খরচের কোনো ব্যাখ্যা মেলে না: রোগীর পরিবারের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল যে, কীভাবে খরচ বাড়ল — তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসেব বা কারণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় না। এই বিল সেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
অপ্রয়োজনীয় আইসিইউ / ভেন্টিলেশন: প্রাথমিক পর্যায়ে আশঙ্কাজনক না হয়েও রোগীকে দীর্ঘক্ষণ আইসিইউ বা ভেন্টিলেশনে রাখার অভিযোগও বহুবার উঠেছে, যা রোগীর পরিবারকে বিশাল অঙ্কের বিল পরিশোধে বাধ্য করেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মত:
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে চিকিৎসা পদ্ধতিও বদলায়। নতুন কোনো সমস্যা ধরা পড়লে পরীক্ষা বা অতিরিক্ত ওষুধের প্রয়োজন হয় — এই কারণেই খরচ বাড়ে।

তবে রাজ্য সরকারের অবস্থান পরিষ্কার – রোগীর পরিবারকে না জানিয়ে একতরফা খরচ চাপানো যাবে না। এই সংশোধনী আইনে পরিণত হলে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। চিকিৎসার নামে অনিয়ন্ত্রিত আর্থিক চাপ বা শোষণের পথ অনেকটাই বন্ধ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যখাতে এক ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy