পোর্টাল বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন, রাজ্যে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের বার্ধক্যভাতা অমিল

ভাঙড়ের চালতাবেড়িয়া অঞ্চলে সম্প্রতি আয়োজিত ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য মানুষ ভিড় জমালেও, সবার দৃষ্টি ছিল একমাত্র বার্ধক্যভাতার কাউন্টারে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী বা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পগুলির জন্য কোনো বিশেষ ভিড় ছিল না। তবে বার্ধক্যভাতার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষমাণ অনেক মানুষই নতুন আবেদনপত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।

কাদিম আলি মোল্লা, মোজাম্মেল মোল্লা এবং আরতি করালের মতো অনেক নাগরিক জানান, “গত তিন-চার বছর ধরে আমরা বারবার পঞ্চায়েত প্রধান ও বিডিও-র কাছে গিয়েছি, কিন্তু কোনোভাবেই বার্ধক্যভাতা পাচ্ছি না।”

এই সমস্যা শুধু ভাঙড়ের নয়, গোটা রাজ্যে বার্ধক্যভাতার জন্য নাগরিকরা প্রায় এক দশক ধরে আবেদন জানাচ্ছেন। তবে, বার্ধক্যভাতা গ্রহণকারী কয়েক লক্ষ মানুষকে তাদের প্রাপ্য সুবিধা আজও মেলেনি। বিশেষত ভাঙড়-২ ব্লকে ৬৭০০ আবেদন জমা পড়লেও, গত দশ মাসে প্রায় ১৬০০ আবেদন এখনও সরকারি পোর্টালে নথিভুক্ত হয়নি, যা ভোটের আগে পোর্টাল বন্ধ থাকার কারণে সম্ভব হয়নি।

ভাঙড়-১ ব্লকের বাসিন্দা অরুণ চক্রবর্তী বলেন, “আমি পুজোপাঠ করে জীবন চালাই, কিন্তু পুরোহিত ভাতা আমার জোটেনি। আমি ৬৫ বছর বয়সী, পাঁচ বছর ধরে আবেদন করেও কোনো ফল পাইনি। আজ বিডিও-র সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।”

জেলা প্রশাসনের সূত্র অনুযায়ী, গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ২৯টি ব্লকে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ বার্ধক্যভাতার জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই এখনও কোনো ভাতা পাননি। এমনকি, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেলে ৬১ বছরে পৌঁছানোর পর বার্ধক্যভাতা পান, তবে সাধারণ কাস্টের পুরুষদের এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে।

তবে, কিছুটা আশার আলো দেখা দিয়েছে। রাজ্য সরকার কর্তৃক ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পে সরকারি বার্ধক্যভাতার জন্য আলাদা কাউন্টার খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে, প্রতি ব্লকে ৫০০ থেকে ৭০০ নতুন আবেদন জমা পড়েছে। এগুলির যাচাই-বাছাই করা হবে এবং পরে ভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, মুখ্যমন্ত্রীর ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে সরাসরি অভিযোগ জানানোর পর এক হাজার মানুষ ভাতা পেয়েছেন। ভাঙড়-২ ব্লকের জনগণ এই সুফলটি পেয়ে আশাবাদী।

এখন সরকার পোর্টালটি খুলে দিয়েছে এবং দ্রুত সমস্ত আবেদন নথিভুক্ত হওয়ার আশা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আশা করা যাচ্ছে যে, শীঘ্রই সমস্যা সমাধান হবে এবং সব আবেদনকারীরা তাদের প্রাপ্য বার্ধক্যভাতা পাবেন।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy