পুরুষতান্ত্রিক মনের আগলও ভাঙছে আরজি কর আন্দোলন? জেনেনিন বিশেষ বিশ্লেষণ

সল্টলেকের এ-কে ব্লকের বাসিন্দা সুতপা মৌলিক, একজন গৃহবধূ। ৫০ বছর বয়সে তিনি প্রথমবারের মতো এতগুলি মিছিলে, সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। ১৪ অগস্টের রাত দখলের পর থেকে তাঁর জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। স্কুলের পূর্বতন ছাত্রীর মিছিলে, স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ডাক্তারদের ধর্নায়, সবখানেই তিনি অংশ নিচ্ছেন। উত্তরপাড়ার সমাপ্তি ঘোষও তাঁর মতোই। বিবাহের আগে টাইপিংয়ের কাজ করতেন সমাপ্তি। বিবাহের পর বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েন। কিন্তু রাত দখলের পর থেকে তাঁর জীবন এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।

সুতপা বলেন, “মেয়ের জন্ম মানেই বাবার বা স্বামীর অধীনে থাকতে হবে, এটা কেন? আমি ভাগ্যবান, আমার পরিবারের কেউ এমনটা বলেনি। কিন্তু অনেক মেয়ের জীবন এই নিয়মের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।” সমাপ্তি এবং সুতপা কি এই মিছিলগুলোর মাধ্যমে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন? তাঁরা নিশ্চিত যে, এই লড়াই শুরু হয়েছে।

১৪ অগস্টের রাত দখলের পর থেকে মহিলারা সামনের সারিতে রয়েছেন। শুধু ছাত্রী বা কর্মজীবী নয়, বাড়ির কাজকর্ম সামলাতে থাকা গৃহবধূরাও রাস্তায় নেমে এসেছেন।

এই আন্দোলনের মাধ্যমে কি পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে? প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক সুকন্যা সর্বাধিকারী মনে করেন, এই আন্দোলন সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, “আমরা মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই পুরুষদের কুদৃষ্টির শিকার। আগে রাস্তায় হাঁটলে আমরা চোখ নামিয়ে নিতাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে।”

সুতপার মেয়েরা, একজন ইউএসএতে চাকরি করেন, অন্যজন কলেজে পড়ে। সুতপা মেয়েদের মা হিসাবে এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পর থেকে আমি বুঝতে পেরেছি যে, মেয়েদের সবসময় বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না।”

পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় মনে করেন, এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ন্যায়বিচার। কিন্তু এর পাশাপাশি সমাজের সার্বিক পরিবর্তনের দাবিও উঠে আসছে। অভিনেত্রী চৈতি ঘোষালও এই মতের সমর্থন করেন। তিনি বলেন, “আমরা সকলের জন্যই একটি নিরাপদ সমাজ চাই, তা পুরুষ হোক বা মহিলা।”

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy