পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আশপাশে মদ-মাংসে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা, করা যাবে না বিক্রিও

বাঙালির অন্যতম প্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য পুরী এবার এক বড় পরিবর্তনের সাক্ষী হতে চলেছে। জগন্নাথ মন্দিরের ২ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ডিম, মাছ, মাংস এবং মদ বিক্রি ও মদ্যপানে নিষেধাজ্ঞা জারির পরিকল্পনা করছে ওডিশার নবগঠিত বিজেপি সরকার। এই পদক্ষেপ পুরীকে একটি বিশুদ্ধ তীর্থনগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যের অংশ বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ওডিশা সরকারের আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দ্রন এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, “বারোশো শতাব্দীর এই ঐতিহাসিক মন্দিরের ২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা সমস্ত মদের দোকান ও বার বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, গ্র্যান্ড রোড বরাবর যেসব খাবারের দোকানে মাছ-মাংস পরিবেশন করা হয়, সেগুলিকে অন্য জায়গায় পুনর্বাসন দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।”

চার ধামের অন্যতম পুরীর ধর্মীয় গুরুত্ব অপরিসীম। এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই সরকার মদ-মাংসে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চাইছে। আইনমন্ত্রীর কথায়, “আমরা পুরীকে একটি সম্পূর্ণ তীর্থনগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জগন্নাথ মন্দিরের চারপাশে আধ্যাত্মিক পরিবেশ বজায় রাখাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।”

আগামী ১৭ জুন রথযাত্রা এবং তার আগে বুধবার স্নানযাত্রার জন্য পুরী জুড়ে এখন সাজো সাজো রব। ঠিক এই সময়েই মদ-মাংসে নিষেধাজ্ঞার খবর সামনে এলো, যদিও এই সিদ্ধান্ত এখনও পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে এবং দ্রুত এটি কার্যকর করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতি বছর লাখো পর্যটক পুরী বেড়াতে যান। জগন্নাথ মন্দির এবং সমুদ্র দর্শনই তাদের মূল আকর্ষণ। পাশাপাশি কোনারক, গুন্ডিচা মন্দির এবং চিলকা লেক দেখতেও ভিড় উপচে পড়ে। সাধারণত পুজো দেওয়ার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়ার অংশ হিসেবে আমিষ খাবারও থাকে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে মাছ-মাংসে রাশ টানতে হবে বাঙালি পর্যটকদের।

জানা গেছে, জগন্নাথ মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দির পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে প্রায় ৭০টিরও বেশি খাবারের দোকান এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হবে। এক সরকারি কর্তা জানিয়েছেন, “ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা জারি হবে, যাতে নতুন নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কারও অসুবিধা না হয়।”

ওডিশা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শ্রীক্ষেত্র স্বাভিমান মঞ্চের সদস্য দেবাশিস দাস। তিনি বলেন, “এটা আমাদের বহুদিনের দাবি ছিল। মন্দিরের পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য এটা অত্যন্ত দরকার।” মন্দিরের সেবায়েত বিনায়ক দাসমহাপাত্রও ওডিশা সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন। সম্প্রতি মন্দিরের সেবায়েতদের সংগঠন ‘ছাতিসা নিজোগ’ অভিযোগ তুলেছিল যে অনেক দর্শনার্থী নেশা করে মন্দিরে আসছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে তাঁরাও খুশি।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy