পুতিনের সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রস্তুত জেলেনস্কি, অবশেষে অবস্থান পরিবর্তন!

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শান্তি সংলাপে বসতে প্রস্তুত তিনি।

সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, “যদি ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং প্রাণহানি ঠেকানোর এই একটি মাত্র পথই খোলা থাকে, সেক্ষেত্রে আমি বলব— আমরা এই সেটআপে যেতে এবং শান্তি সংলাপে বসতে প্রস্তুত।”

“আর আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন যে তার (পুতিন) সম্পর্কে আমার মনোভাব কী— তার উত্তর হলো— আমি তার প্রতি তেমন দয়া-মায়া অনুভব করি না এবং তাকে শত্রু মনে করি; আর আমার মনে হয়, তিনিও আমকে শত্রুই মনে করেন।”

উল্লেখ্য, পুতিনের সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহ প্রকাশের মাধ্যমে নিজের পূর্ব অবস্থান থেকে কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছেন জেলেনস্কি। কারণ এর আগে তুরস্ক, বেলারুশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বেশ কয়েক বার রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি সংলাপের জন্য জেলেনস্কিকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে বেলারুশ এবং তুরস্ক দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে সংলাপের আয়োজনও করেছিল; কিন্তু জেলেনস্কি সেসব আহ্বান ও আয়োজনে সাড়া দেননি।

উপরন্তু, ২০২২ সালে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রিও জারি করেছিলেন জেলেনস্কি। সেই ডিক্রিতে তিনি বলেছিলেন, যতদিন পুতিন ক্ষমতায় থাকবেন— ততদিন মস্কোর সঙ্গে কোনো শান্তি সংলাপে বসবে না ইউক্রেন।

২০১৫ সালে সাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘণ, ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী, যা এখনও চলছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

প্রায় তিন বছরের যুদ্ধে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া এবং খেরসন— এই চার প্রদেশের দখল নিয়েছে রাশিয়া। গত বছর মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কিয়েভ যদি ক্রিমিয়াসহ এই চার প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ইউক্রেনে সামরিক অভিয়ানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।

জবাবে, রাশিয়া যদি অধিকৃত অঞ্চলগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, শুধু তাহলেই শান্তি সংলাপে বসবে ইউক্রেন।

অবশ্য সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন ছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন কিয়েভকে নিয়মিত সমরাস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছিল।

কিন্তু ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এই চিত্রপট পাল্টে দিয়েছে। কারণ সেই নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই ইউক্রেনকে সহায়তা প্রদানের বিপক্ষে ছিলেন।

গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। সেসব আদেশের মধ্যে বিদেশে সহায়তা প্রদান স্থগিত সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশও ছিল।

ট্রাম্প সেই আদেশে স্বাক্ষরের পর থেকে ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তাপ্রবাহ বন্ধ রয়েছে।

সূত্র : আরটি, ফ্রান্স ২৪

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy