
একটি মিষ্টির দোকানের ‘মাইসোর পাক’ নামের মিষ্টি থেকে ‘পাক’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘শ্রী’ যোগ করে নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘মাইসোর শ্রী’। রাজস্থানের জয়পুরের এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই এই নাম পরিবর্তনের পেছনের কারণ জানতে চাইছেন।
জয়পুরের অন্তত তিনটি বিখ্যাত মিষ্টির দোকান তাদের মিষ্টির নাম পরিবর্তন করেছে, যেগুলোর নামে ‘পাক’ শব্দটি ছিল। ‘আম পাক’ এখন ‘আম শ্রী’, ‘গোন্ড পাক’ হয়েছে ‘গোন্ড শ্রী’, ‘স্বর্ণ ভস্ম পাক’ নতুন নাম পেয়েছে ‘স্বর্ণ শ্রী’, এবং ‘চণ্ডী ভস্ম পাক’ বদলে হয়েছে ‘চণ্ডী শ্রী’। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত মিষ্টি ‘মাইসোর পাক’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘মাইসোর শ্রী’ রাখা।
এই নাম পরিবর্তনের কারণ হিসেবে কিছু ক্রেতার ‘পাক’ শব্দটি নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশকে দায়ী করা হয়েছে। কারণ পাকিস্তানকে অনেক সময় সংক্ষেপে ‘পাক’ বলা হয়ে থাকে। কেউ কেউ এমনকি ‘মাইসোর পাক’-এর নাম ‘মাইসোর ভারত’ রাখারও প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও সংশ্লিষ্ট মিষ্টিগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই, বরং এগুলি ভারতেরই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। উদাহরণস্বরূপ, ‘মোতি পাক’ নামের মিষ্টিটিরও নাম বদলে ‘মোতি শ্রী’ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জয়পুরের বৈশালী নগর এলাকার নামকরা মিষ্টির দোকান ‘তেওহার সুইটস’-এর মালিক অঞ্জলি জৈন জানিয়েছেন, মিষ্টির নামে যাতে জাতীয় অহংবোধ প্রতিফলিত হয়, সেজন্যই এই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “দেশাত্মবোধের ভাবনা শুধু সীমান্তে থাকবে কেন, প্রত্যেক ভারতীয়র ঘরে আর মনে এই ভাবনাটা থাকা দরকার।”
জয়পুরেরই আরেকটি মিষ্টির দোকানের মালিক মোহিত জৈন দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, “প্রতিদিনই ক্রেতারা এসে আমাদের বলছিলেন নাম বদল করার কথা। ‘পাক’ শব্দটা শুনতে তাদের অস্বস্তি হচ্ছিল। তাই মাথা খাটিয়ে আমরা মিষ্টিগুলোর নামে একটা ভারতীয় পরিচয় আনতে চেয়েছি।”
‘পাক’ শব্দের প্রকৃত অর্থ
‘পাক’ শব্দটি নিয়ে এই বিতর্কের মধ্যে এর প্রকৃত অর্থ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলা একাডেমির অভিধান অনুযায়ী, ‘পাক’ শব্দটির একটি অর্থ হলো রন্ধন, রন্ধনকার্য এবং অগ্নিতাপে সিদ্ধকরণ। এছাড়াও, পক্বতা বা শুভ্রতা বোঝাতে এবং ঘূর্ণন, আবর্তন বা প্রদক্ষিণ অর্থেও এটি ব্যবহৃত হয়।
ভাষাবিদ অজিত ওয়াডনেকর ‘পাক’ শব্দের ভারতীয় প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জানান, ভারতীয় সংস্কৃতিতে যখন কোনো বস্তু আগুনের মধ্যে দিয়ে যায়, তখন তাকে পবিত্র মনে করা হয়। কোনো ধাতু আগুনে দেওয়া হলে সেটি একটি সম্পূর্ণ অন্য বস্তুতে রূপান্তরিত হয় এবং এই গলে যাওয়া অবস্থাকে ‘পক’ অর্থাৎ পবিত্র বলা হয়। এই ‘পক’ শব্দই রূপান্তরিত হয়ে ‘পাক’ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হিন্দি আর ফার্সি – দুই ভাষাতেই ‘পাক’ শব্দের মূল অর্থ হলো পবিত্র, শুদ্ধ বা নির্মল। হিন্দিতে ‘পাক’ শব্দটার দুটো অর্থ আছে – রান্না করা এবং পবিত্র।
এই নাম পরিবর্তন কি কেবল ক্রেতাদের সংবেদনশীলতার প্রতি সাড়া নাকি এর পেছনে আরও গভীর কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে।