
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষিতে গোটা দেশ যখন উত্তপ্ত, ঠিক তখনই শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় একটি মোড়ের নাম পরিবর্তন ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক ও উত্তেজনা। স্থানীয়দের একাংশের আপত্তি এবং প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ‘পাকিস্তান মোড়’ নামে পরিচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের নাম বদলে ‘ভারতমাতা মোড়’ রেখেছে বঙ্গীয় হিন্দু মহামঞ্চ নামে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতিতেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার বিকেলে। মাটিগাড়ার ওল্ড মাটিগাড়া রোডে ২ নম্বর রেলগেট থেকে কিছুটা দূরে বিশ্বাস কলোনি গ্রামের বাইপাস মোড়টি স্থানীয়দের কাছে দীর্ঘকাল ধরে ‘পাকিস্তান মোড়’ নামেই পরিচিত ছিল। গত সোমবার বিকেলে বঙ্গীয় হিন্দু মহামঞ্চের কিছু সদস্য সেখানে একটি নতুন সাইনবোর্ড লাগিয়ে এটিকে ‘ভারতমাতা মোড়’ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।
এই আকস্মিক নাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিবাদ জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের প্রধান এবং জোরালো আপত্তি ছিল নাম পরিবর্তনের পদ্ধতি নিয়ে। স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন, পুলিশ বা পঞ্চায়েতের কোনো অনুমতি না নিয়ে এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই বহিরাগত কিছু যুবক নিজেদের ইচ্ছামতো এই নামকরণ করেছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাঁরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে গ্রামে ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু স্থানীয় বাসিন্দা নতুন নাম ‘ভারতমাতা’ নিয়েও আপত্তি তুলেছেন বলে খবর। এই নিয়ে নাম পরিবর্তনকারী সংগঠন এবং স্থানীয়দের মধ্যে বচসাও হয়।
এ বিষয়ে বঙ্গীয় হিন্দু মহামঞ্চের সভাপতি বিক্রমাদিত্য মণ্ডল জানিয়েছেন, যেহেতু আগের নাম ছিল ‘পাকিস্তান মোড়’, যা আপত্তিকর, তাই তাঁরা এটিকে দেশের নামে ‘ভারতমাতা মোড়’ করেছেন। তিনি দাবি করেন, এর পিছনে কোনো অশান্তি সৃষ্টি বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। তবে গ্রামবাসীদের যদি ভারতমাতা নামে আপত্তি থাকে, তবে মুনি ঋষিদের নামে নতুন নামকরণের বিষয়টিও ভেবে দেখা যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতিতে শাসকদল তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য অভিযোগ করেছেন যে, বিজেপির মদতে বহিরাগত যুবকরা গ্রামে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছিল। যদিও মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মন এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোনো যোগ থাকার কথা অস্বীকার করেছেন এবং নাম পরিবর্তন নিয়ে দলের কোনো আপত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন।
প্রশাসনিকভাবেও এই নাম পরিবর্তন বৈধ নয়। মাটিগাড়ার বিডিও বিশ্বজিৎ দাস জানিয়েছেন যে, ওই সংগঠনের তরফে মোড়ের নাম পরিবর্তনের জন্য একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আইন অনুযায়ী রাস্তা, মোড় বা গ্রামের নামকরণ করার অধিকার একমাত্র পঞ্চায়েতের। সংগঠনটি নাম পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেয়নি।
সব মিলিয়ে মাটিগাড়ার ‘পাকিস্তান মোড়’-এর নাম পরিবর্তন ঘিরে বর্তমানে স্থানীয় স্তরে আইনি জটিলতা এবং রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।