পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলার প্রচেষ্টা ঠেকাল সেনাবাহিনী, নিহত ১০ সন্ত্রাসী

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায় একটি সম্ভাব্য আত্মঘাতী হামলা প্রতিহত করেছে সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় বন্দুকযুদ্ধে ১০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান জেলার জানদোলা এলাকায় একটি সেনা চেকপোস্টের কাছে এই ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী সংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার জানদোলার ওই চেকপোস্টে একটি বোমায় ভর্তি গাড়ি দ্রুতগতিতে প্রবেশের চেষ্টা করে। সেনা সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে গাড়িটি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে গাড়ির চালকসহ মোট ১০ আরোহী নিহত হয়। গাড়িটিতে শক্তিশালী বোমা সংযোজিত ছিল এবং কয়েকজন আরোহীর দেহে ‘সুইসাইড ভেস্ট’ পাওয়া গেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমাদের সেনারা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে হামলাকারীদের মোকাবিলা করেছে। পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে আমরা বদ্ধপরিকর।”

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেছেন, “এই সাহসিকতার জন্য সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন। পাকিস্তানের জনগণ সবসময় তাদের পাশে রয়েছে।” তিনি সন্ত্রাসবাদ দমনে সেনাবাহিনীর প্রতিশ্রুতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

বেলুচিস্তানে ট্রেন ছিনতাইয়ের পর নতুন হামলা:

এই ঘটনার মাত্র দুদিন আগে বেলুচিস্তানে বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) একটি ট্রেন ছিনতাই করে যাত্রীদের জিম্মি করেছিল। সেনাবাহিনীর ব্যাপক অভিযানে ৩৩ জন বিএলএ সন্ত্রাসী ও ৪ জন সেনা সদস্য নিহত হয়। অভিযানে জিম্মি যাত্রীদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তবে খাইবার পাখতুনখোয়ায় বিএলএ’র উপস্থিতি না থাকলেও এখানে তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সক্রিয়।

টিটিপি’র ক্রমবর্ধমান হুমকি:

আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবানের সমর্থনে টিটিপি গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। আফগান তালেবানের পথ অনুসরণ করে টিটিপি পাকিস্তানে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে ক্রমাগত সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে আসছে। খাইবার পাখতুনখোয়ার বিভিন্ন জেলা টিটিপি’র প্রধান ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এই প্রদেশে টিটিপি ২৭টি হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১১ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, ৬ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ২ জন সন্ত্রাসী।

চলমান তদন্ত ও নিরাপত্তা জোরদার:

পুলিশ ও সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জানদোলার এই হামলায় টিটিপি’র সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এলাকায় সন্ত্রাসীদের সম্পূর্ণ নির্মূলের জন্য পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে। ঘটনার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে।

এই ঘটনা পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সন্ত্রাসবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকির আরেকটি প্রমাণ। সেনাবাহিনী ও সরকার এই হুমকি মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

সূত্র: জিও টিভি

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy