“পাকিস্তানের উপর আরও এক প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি!”-এবার আফগানিস্তান থেকে আসা জলও রুখবে ভারত?

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান গভীর টানাপোড়েনের আবহে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন মাত্রা পাচ্ছে। একদিকে যেমন জলবণ্টন নিয়ে ইসলামাবাদকে চাপে ফেলছে দিল্লি, তেমনই অন্যদিকে প্রতিবেশী আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে কৌশলগত অবস্থান মজবুত করছে ভারত। এই কৌশলগত পদক্ষেপগুলি পাকিস্তানের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

সিন্ধু জলচুক্তি এবং ভারতের অবস্থান

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি (Indus Waters Treaty) স্থগিত করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ভারত এই চুক্তি থেকে সরে আসার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু নদীর জল ভাগ করে নিত।

এই সিদ্ধান্তের পর ভারত চেনাব, ঝিলাম ও সিন্ধু নদীর উপর নতুন প্রকল্প শুরু করতে চলেছে। এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তানের জন্য জল সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। পাকিস্তানের কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই নদীগুলির জল অত্যাবশ্যক, কারণ দেশটির মোট জল সরবরাহের প্রায় ৮০% এই নদীগুলির উপর নির্ভরশীল। ফলে ভারতের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারত সরকারের এই পদক্ষেপকে পাকিস্তান ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে বিবেচনা করছে। ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই ইস্যুতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।

আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার

পাকিস্তানের সঙ্গে এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক জোরদার করার উপর মনোনিবেশ করেছে। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

আফগানিস্তানের প্রতি ভারতের সমর্থনের একটি বড় নিদর্শন হলো কাবুল নদীর উপর শাহতুত বাঁধ নির্মাণে ভারতের সহায়তা। এই বাঁধ নির্মাণের জন্য ভারত ২৩৬ মিলিয়ন ডলার আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। শাহতুত বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হলে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ও তার আশেপাশের প্রায় ২০ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল পাবে। তবে, এই বাঁধ নির্মাণের ফলে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে জল সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা পাকিস্তানের জন্য একটি নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য

ভারতের এই কৌশলগত পদক্ষেপগুলি পাকিস্তানের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। জল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে। এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ধারণ করবে সময়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy