পহেলগাঁও হামলার ৫৫ দিন পরেও অধরা জঙ্গিরা, মোদী সরকারের কাছে ৫ প্রশ্নের জবাব চাইলেন অভিষেক

পাহেলগাঁও জঙ্গি হামলার ঘটনার পর ৫৫ দিনেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ঘটনার নেপথ্যে থাকা প্রশ্নগুলির উত্তর অধরা। এই প্রেক্ষাপটে অপারেশন সিঁদুর নিয়েও বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নৈশভোজে যোগ দিয়েও কোনও সদুত্তর না পাওয়ার পর এবার পাঁচটি বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে কোণঠাসা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আজ সোমবার নিজের এক্স (পূর্বের টুইটার) হ্যান্ডেলে এই প্রশ্নগুলি উত্থাপন করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জবাবদিহি চেয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “পাহেলগাঁও জঙ্গি হামলার ৫৫ দিনেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, গণতন্ত্রে মূলধারার গণমাধ্যম, বিরোধী দলের সদস্যরা, অথবা বিচারবিভাগ কেউই ভারত সরকারের সামনে এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করতে এগিয়ে আসেনি। তবে জাতির কল্যাণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন নাগরিক এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে, আমি ভারত সরকারের সামনে এই পাঁচটি প্রশ্ন উত্থাপন করছি।”

অভিষেকের উত্থাপিত পাঁচটি প্রশ্ন:

১. সীমান্ত লঙ্ঘন এবং হতাহতের ঘটনা: অভিষেক প্রশ্ন তুলেছেন, “চারজন জঙ্গি কেমন করে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে একটি আক্রমণ চালাতে সক্ষম হয়েছিল যার ফলে ২৬ জন নিরীহ সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছিল? জাতীয় নিরাপত্তায় এই বিশাল লঙ্ঘনের দায় কোথায়?” অনুপ্রবেশ যে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন, তা বারবার মনে করিয়ে দিয়ে তিনি নিরাপত্তার এই গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

২. গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং আইবি প্রধানের মেয়াদ বৃদ্ধি: অপারেশন সিঁদুর অভিযান করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও হামলার মূল হোতাদের ধরতে না পারায় অভিষেক গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, “যদি এটি একটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা হয়, তাহলে কেন গোয়েন্দা ব্যুরো প্রধানকে একবছরের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল, তাও আক্রমণের মাত্র একমাস পরে? কেন তাঁকে জবাবদিহি করার পরিবর্তে পুরস্কৃত করা হয়েছিল? বাধ্যবাধকতা কী? যদি ভারত সরকার বিরোধী নেতাদের (আমি সহ), সাংবাদিক এবং বিচারকদের বিরুদ্ধে পেগাসাস স্পাইওয়্যার সুবিধাজনকভাবে ব্যবহার করতে পারে, তাহলে জঙ্গি নেটওয়ার্ক এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে একই সরঞ্জাম ব্যবহার করতে বাধা কোথায়?”

৩. জঙ্গিদের অবস্থান: তৃতীয় প্রশ্নটি জঙ্গিদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে। অভিষেক জানতে চেয়েছেন, “এই নৃশংস, ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী চার জঙ্গি কোথায়? তারা কি মৃত না জীবিত? যদি তাদের নিকেশ করা হয়ে থাকে, তাহলে সরকার কেন স্পষ্ট বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে? আর যদি না থাকে, তাহলে কেন নীরবতা?”

৪. পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর এবং যুদ্ধবিরতি সমঝোতা: পাক অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) পুনরুদ্ধার এবং যুদ্ধবিরতি সমঝোতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক। তাঁর প্রশ্ন, “ভারত কখন পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর পুনরুদ্ধার করবে? কেন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবির জবাব দেয়নি যে তিনি বাণিজ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছিলেন—ঠিক যেমন জাতি, ধর্ম এবং রাজনৈতিক সম্প্রীতি নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল, ন্যায়ের বিজয় উদযাপন করেছিল এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্ব ও আত্মত্যাগকে অভিবাদন জানিয়েছিল? ১৪০ কোটি ভারতীয়ের আবেগকে কেন অবহেলা করা হয়েছিল? কেন এই ধরনের সমঝোতার কারণ হয়েছিল?”

৫. বিশ্বের কূটনীতি এবং ভণ্ডামি: শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও ভণ্ডামি নিয়ে। অভিষেক ভারত সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন: “পাহেলগাঁও হামলার পর গত একমাসে ৩৩টি দেশের কাছে পৌঁছানোর পর, কতজন ভারতকে স্পষ্ট সমর্থন জানিয়েছে? আমরা যদি সত্যিই বিশ্বগুরু এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হই, তাহলে পাহেলগাঁও হামলার পরপরই কেন আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক পাকিস্তানকে ১ বিলিয়ন এবং ৪০ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ অনুমোদন করেছে? সীমান্ত সন্ত্রাসবাদে বারবার জড়িত একটি দেশ কীভাবে শুধু বিশ্বব্যাপী তদন্ত এড়িয়েছে তাই নয়, বরং পুরস্কৃতও হয়েছে? আরও আশ্চর্যজনক বিষয়, মাত্র একমাস পরেই কেন পাকিস্তানকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস দমন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছিল? বিঃদ্রঃ: গত ১০ বছরে বৈদেশিক বিষয়ে দুই লক্ষ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হয়েছে। ভারতীয় জনগণের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং ফলাফল প্রাপ্য–নীরবতা এবং স্পিন নয়! জাতি একটি প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায়!”

It has been over 55 DAYS since the PAHALGAM terror attack. It is deeply concerning that in a democracy neither the mainstream media, members of the opposition, nor the judiciary has stepped forward to raise these five critical questions before the Government of India. However, as…

— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) June 16, 2025

অভিষেকের এই প্রশ্নগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে, বিশেষত যখন জাতীয় নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি উভয়ই প্রশ্নের মুখে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy