পহেলগাঁও হামলার জবাব – দক্ষিণ কাশ্মীরে ৩ দিনে ৬ জঙ্গি নিকেশ, ঘটনায় আহত কিছু জার্মান পর্যটক

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার পর থেকে দক্ষিণ কাশ্মীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে বড় সাফল্য পেয়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। গত তিন দিনের ধারাবাহিক অভিযানে মোট ৬ জন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়েছে। এই অভিযানগুলিতে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কৌশল পরিবর্তন করে নির্দিষ্ট কিছু এলাকাকে নিশানা করেছে।

কুখ্যাত সন্ত্রাসী শহীদ কুট্টে সহ নিহত ৬ জন:

নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত ৬ জন জঙ্গির মধ্যে ছিল কুখ্যাত সন্ত্রাসী শহিদ কুট্টে। গত বছরের ১৮ মে সোপিয়ানের হীরপোরায় এক পঞ্চায়েত প্রধানের উপর হামলা এবং তার এক মাস আগে ৮ এপ্রিল ড্যানিশ রিসোর্টে জার্মান পর্যটকদের উপর গুলি চালানোর ঘটনা সহ বেশ কয়েকটি বড় নাশকতার সঙ্গে সে সরাসরি জড়িত ছিল। তার মৃত্যু নিরাপত্তা বাহিনীর একটি বড় সাফল্য।

নিরাপত্তা বাহিনীর নতুন কৌশল ও সমন্বয়:

এই অভিযান প্রসঙ্গে কাশ্মীর পুলিশের আইজি ভিকে বিরদি এবং ভিক্টর ফোর্সের জিওসি মেজর জেনারেল ধনঞ্জয় যোশী পুলওয়ামায় একটি যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন। আইজি বিরদি বলেন, গত এক মাসে জঙ্গি কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কৌশল পর্যালোচনা করেছে এবং কয়েকটি নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযানের উপর গভীরভাবে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে চমৎকার সমন্বয়ের কারণেই দুটি অভিযান সফল হয়েছে বলে জানান এবং এটিকে উপত্যকা পুলিশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেন। বিরদি আরও বলেন, কাশ্মীরে যে কোনও জঙ্গি কার্যকলাপ বন্ধ করতে নিরাপত্তা বাহিনী বধ্যপরিকর এবং সদাপ্রস্তুত।

দুটি সফল অভিযান: সোপিয়ান ও ত্রাল:

ভিক্টর ফোর্সের জিওসি মেজর জেনারেল যোশী জানান, পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী দক্ষিণ কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি এলাকাকে ‘ফোকাস এরিয়া’ হিসেবে চিহ্নিত করে। গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে বরফ গলে যাওয়ার পর জঙ্গিরা উঁচু পাহাড়ি এলাকায় চলে গিয়েছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে, সেনাবাহিনীকে পাহাড়ি এলাকার পাশাপাশি জঙ্গলে মোতায়েন করা হয়েছিল। গত মঙ্গলবার সোপিয়ানের কেল্লার এবং বৃহস্পতিবার পুলওয়ামার ত্রালের নাদার এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের দুটি আলাদা আলাদা সংঘর্ষ হয়। মেজর যোশী জানান, ১২ মে রাতে সোপিয়ানের কেল্লারে জঙ্গিদের উপস্থিতি সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিল বাহিনী। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এলাকা ঘিরে ফেললে জঙ্গিরা গুলি চালিয়ে চ্যালেঞ্জ করে, ফলে সংঘর্ষ হয় এবং সেখানেই তিন জঙ্গির মৃত্যু হয়। ত্রালের সংঘর্ষ সম্পর্কে জিওসি বলেন, সেখানেও গোয়েন্দা তথ্য ছিল। গ্রামটি ঘিরে ফেলার পর জঙ্গিরা বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে গুলি চালিয়েছিল। এক্ষেত্রে শিশু-সহ নিরীহ নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এরপর বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানোর সময় আরও তিন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়।

অভিযান জারি থাকবে:

সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, এই অভিযান এখানেই শেষ নয়। জঙ্গিরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, নিরাপত্তা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করবে এবং নিকেশ করবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy