
প্রকৃতি তার নিজস্ব ছন্দে চলে, এবং তার ধ্বংসলীলার অন্যতম ভয়াবহ রূপ হলো ঘূর্ণিঝড়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সৃষ্ট এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলো প্রতি বছর ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটায়। বিজ্ঞানীরা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিতে পারলেও, সেগুলোকে থামানোর কোনো কার্যকর উপায় এখনো তৈরি হয়নি। কিন্তু এবার সেই পথ খুলে ফেলার দাবি করেছেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-র (Australian National University) গবেষকেরা।
অণুবীক্ষণিক কণার জাদুতে থামবে ঘূর্ণিঝড়?
গবেষকেরা এক যুগান্তকারী পদ্ধতির কথা ভাবছেন, যেখানে ঘূর্ণিঝড়কে রুখে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা যাওয়া ক্ষুদ্র কণাকে। এই কণাগুলি বিভিন্ন আকারের হতে হবে, তবে অবশ্যই সব কণাই হবে আণুবীক্ষণিক।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, যখনই সমুদ্রে কোনো ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে বলে জানা যাবে, তখনই তার প্রাথমিক পর্যায়ে এই কণাগুলিকে যদি তৈরি হতে থাকা ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া যায়, তাহলে সেগুলি প্রথমে ঝড়কে আরও শক্তিশালী করলেও, শেষ পর্যন্ত সেটিকে দুর্বল করে দেবে।
বিজ্ঞানীরা এটিকে একটি জটিল পদার্থবিদ্যা বলছেন। তাদের মতে, কীভাবে মেঘ তৈরি হচ্ছে, কীভাবে তার ওপর ক্ষুদ্র কণা প্রভাব ফেলছে, কীভাবে উত্তাপ নির্গত হচ্ছে – এসবই এক একটি শর্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়কে ধ্বংসাত্মক আকার নিতে আটকে দেবে এবং তাকে দুর্বল করবে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই ক্ষুদ্র কণাগুলিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক স্তরে প্রবেশ করানো হবে কীভাবে? গবেষকেরা জানিয়েছেন, এজন্য অনেক বিমানের দরকার হবে, যে বিমানগুলো এই ক্ষুদ্র কণাগুলিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘূর্ণিঝড়টির কাছে গিয়ে প্রবেশ করাবে।
এই পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে আগামী দিনে বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে তৈরি হওয়া ভয়ঙ্কর সব ঘূর্ণিঝড়কে অনেকটাই রুখে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা। যদি এই গবেষণা সফল হয়, তাহলে এটি মানবজাতিকে প্রকৃতির অন্যতম বৃহৎ ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে এক বিশাল পদক্ষেপ হবে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।