নববধূর নৃশংস হত্যাকাণ্ড ফরিদাবাদে, শ্বশুরই খুনি! মাটি খুঁড়ে মিলল দেহ, যৌতুক প্রথার কালো ছায়া?

বিয়ের দু’বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ২৪ বছর বয়সী নববধূ তনু সিংকে হত্যার পর মাটিতে পুঁতে ফেলার এক মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এসেছে হরিয়ানার ফরিদাবাদে। পুলিশি তদন্তে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত হিসেবে তনুর শ্বশুর ভূপ সিংকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে যৌতুক সংক্রান্ত হয়রানিকেই এই ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা সমাজের গভীরে প্রোথিত এক ব্যাধির ভয়াবহ রূপকে আবারও উন্মোচন করেছে।

১০ ফুট গভীর গর্তে পচে যাওয়া দেহ উদ্ধার
উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদ জেলার শিকোহাবাদের বাসিন্দা তনু সিং-এর সঙ্গে ফরিদাবাদের রোশননগরের বাসিন্দা অরুণ সিং-এর বিয়ে হয়েছিল দু’বছরেরও কম সময় আগে। দীর্ঘ দু’মাস ধরে নিখোঁজ থাকার পর শুক্রবার ভোরে সিং পরিবারের বাড়ির ঠিক বাইরে একটি গলিতে ১০ ফুট গভীর গর্ত থেকে তনুর পচে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। একটি কংক্রিটের স্ল্যাবের নিচেই তার মৃতদেহ পাওয়া যায়, যা তনু নিখোঁজ হওয়ার পরপরই অর্থাৎ খুনের ঘটনার পর তৈরি করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।

শ্বাসরোধ করে হত্যা, এরপর গর্তে পুঁতে ফেলার স্বীকারোক্তি
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তনুর শ্বশুর ভূপ সিং তার পুত্রবধূকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, গত ২১-২২ এপ্রিল রাতে, ভূপ সিং বাড়িতেই তনুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর প্রৌঢ় ভূপ তার পুত্রবধূর মৃতদেহ একটি গর্তে ফেলে দেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই গর্তটি মূলত জল নিষ্কাশনের জন্য খনন করা হয়েছিল। এসিপি রাজেশকুমার লোচন জানিয়েছেন, “আমরা বর্তমানে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এই হত্যাকাণ্ডে সম্ভাব্য ভূমিকা তদন্ত করছি। যৌতুক-সম্পর্কিত উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করা হচ্ছে, তবে আরও তদন্ত চলছে।”

যৌতুক প্রথা ও পারিবারিক নির্যাতন: বোন প্রীতির অভিযোগ
খুনের পর, গত ২৫শে এপ্রিল ভূপ সিং দাবি করেছিলেন যে তনু নিখোঁজ হয়ে গেছে। কিন্তু তনুর বোন প্রীতি যখন ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাননি, তখন তার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। প্রীতি জানান, বিয়ের প্রথম দিন থেকেই তার বোন যৌতুকের জন্য হয়রানির শিকার হয়ে আসছিলেন। তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই তনু তার বাবা মায়ের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানেই থাকেন।

প্রীতি সাংবাদিকদের বলেন, “বিয়ের মাত্র কয়েক মাস পরেই তনু আমাদের সঙ্গে ফিরে এসেছিল কারণ তার সঙ্গে সেখানে ভালো ব্যবহার করা হচ্ছিল না। সে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের সঙ্গে ছিল। যখন আমরা তাকে শ্বশুরবাড়িতে ফের পাঠাই, তখন নির্যাতন আবার শুরু হয়। তারা তাকে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে দিত না, এমনকি ফোনেও না।” তার এই অভিযোগ যৌতুক প্রথার ভয়াবহ রূপ এবং নারীর প্রতি সহিংসতার এক নিষ্ঠুর চিত্র তুলে ধরেছে।

প্রতিবেশীদের বয়ান ও এফআইআর
২৩শে এপ্রিল, অর্থাৎ তনুর নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন আগে, প্রতিবেশীরা জানান যে তারা সিং পরিবারের বাড়ির বাইরে একজন মাটি সরবরাহকারীকে আসতে দেখেছেন। ড্রেনেজ নির্মাণের কারণ দেখিয়ে অরুণ সিং (তনুর স্বামী) এবং ভূপ সিং প্রায় ১০ ফুট গভীর একটি গর্ত খনন করিয়েছিলেন। এই তথ্য এখন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে।

২৫শে এপ্রিল, তনুর নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করতে পুলিশের কাছে যান ভূপ সিং। তনুর দেহ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে মৃত্যুর সঠিক সময় এবং কারণ নির্ধারণের জন্য। এই ঘটনায় সিং পরিবারের চার সদস্য – ভূপ সিং, তার স্ত্রী সোনিয়া, ছেলে অরুণ এবং মেয়ে কাজলের নামে এফআইআর করা হয়েছে। এসিপি লোচনের মতে, কথিত খুনের সময় কাজল এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য বাড়িতেই ছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ এই ঘটনায় জড়িত কিনা, বা তাদের মধ্যে কেউ এই হত্যাকাণ্ড আগে থেকে জানত কিনা, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। এই নৃশংস ঘটনা আবারও নারী সুরক্ষা এবং পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরল।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy