
নিয়ম মেনে শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং পরীক্ষার নতুন বিধি ঘোষণার পরেও বরফ গলল না। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শুক্রবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। নতুন বিধিতে শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা ও ক্লাস নেওয়ার দক্ষতার উপর জোর দেওয়া হলেও, চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ তা মানতে নারাজ। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, তাঁরা আর নতুন করে পরীক্ষায় বসতে চান না।
এই দাবিতে আজ ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র সদস্যরা শিয়ালদহ থেকে অর্ধনগ্ন হয়ে নবান্ন অভিমুখে মিছিলের ডাক দেন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের ‘নগ্ন’ করে দেওয়া হয়েছে, তাই এই প্রতীকী প্রতিবাদ।
তবে ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের মিছিল শুরু হওয়ার আগেই শিয়ালদহ চত্বর কার্যত পুলিশের দুর্গে পরিণত হয়। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মিছিল আটকাতে disp8৪০ জন কনস্টেবল, ২৫ জন র্যাফ, জলকামান, ৫ জন এসিপি, ১২ জন ইন্সপেক্টর, এবং ৬০ জন এসআই মোতায়েন করা হয়েছিল। এছাড়াও কাঁদানে গ্যাস সহ অন্যান্য সরঞ্জামও মজুত রাখা হয়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল যে, সেখানে আইপিএস পদমর্যাদার পুলিশ অফিসারদেরও দেখা যায়। ১৫০ জন মহিলা পুলিশকর্মীও মোতায়েন ছিলেন। সব মিলিয়ে চাকরিহারাদের বিক্ষোভ রুখতে পুলিশ এদিন কোমড় বেঁধে নেমেছিল।
সকাল থেকেই শিয়ালদহ চত্বরে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। চাকরিহারাদের ‘অর্ধনগ্ন’ মিছিল আটকানোর চেষ্টায় কলকাতা পুলিশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটকও করে। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে প্রকাশিত নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারির হিসাবে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। সংরক্ষিত শ্রেণির প্রার্থীরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বয়সের ছাড় পাবেন।
নতুন বিধি অনুযায়ী, মেধাতালিকা/প্যানেল এবং অপেক্ষমান মেধাতালিকার মেয়াদ প্রথম কাউন্সেলিংয়ের পর থেকে এক বছর পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে কমিশন চাইলে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে সেই মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়াতে পারবে। প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষার ওএমআর শিট দু’বছর সংরক্ষণ করতে হবে, এবং স্ক্যান করা কপি দশ বছর পর্যন্ত রাখতে হবে।
এছাড়াও, উচ্চ প্রাথমিকের (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথাও নতুন বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে আগের মতোই টেট উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। টেটের প্রাপ্ত নম্বরের গুরুত্ব সর্বোচ্চ ৪০, লিখিত পরীক্ষা ২৫ নম্বরের, ইন্টারভিউ ১৫ নম্বরের এবং ক্লাস নেওয়ার দক্ষতা ও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য ৫ নম্বর করে ধার্য করা হয়েছে।
তবে এই নতুন নিয়মাবলী চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশকে শান্ত করতে পারেনি, যার ফলস্বরূপ আজ শিয়ালদহে অভূতপূর্ব বিক্ষোভ দেখা গেল। পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ের পরেও আন্দোলনকারীরা তাঁদের দাবিতে অনড় রয়েছেন।