নীতি আয়োগের প্রকাশিত একটি সরকারি রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রের জায়গায় বিহারের ভূখণ্ড দেখানো হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের পরিচয় ও মর্যাদার উপর এই সরাসরি আঘাতের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান সুমন কে. বেরিকে তীব্র ভাষায় চিঠি লিখে এই ঘটনার ব্যাখ্যা ও অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
“পরিচয়ের প্রতি সরাসরি অবমাননা” – মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া চিঠিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ‘সামারি রিপোর্ট ফর দ্য স্টেট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ শীর্ষক ওই রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তে বিহারের মানচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে এটিকে কেবল একটি “কারিগরি ত্রুটি” হিসেবে দেখতে নারাজ। তাঁর মতে, এটি “রাজ্যের পরিচয় ও মর্যাদার প্রতি সরাসরি অবমাননা”। তিনি আরও লেখেন, “এই ধরনের গুরুতর ভুল একটি জাতীয় স্তরের প্রতিষ্ঠানের তরফে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচায়ক।”
রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনায় নীতি আয়োগের রিপোর্টের গুণমান এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের নীতি নির্ধারক এবং নাগরিকেরা যেসব তথ্যের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, সেইসব সরকারি রিপোর্টে যদি এমন চরম গাফিলতি থাকে, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ধরনের ত্রুটি দেশের নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ার সততাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয় বলে তাঁর মত।
তৃণমূলের তীব্র প্রতিক্রিয়া: “পরিচয় মুছে ফেলার পরিকল্পিত অপচেষ্টা”
শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, সকাল থেকেই এই ঘটনায় সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় এক কড়া পোস্টে তারা লেখে, “বিজেপি প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছিল বাঙালির গর্বে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্বপ্নের যোজনা কমিশনকে তুলে দিয়ে তার জায়গায় এনেছিল নীতি আয়োগ। তারপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে অপমান করা হয়েছিল, নীতি আয়োগের মঞ্চে তাঁর মাইক্রোফোন বন্ধ করে। এবার, সেই নীতি আয়োগের অফিসিয়াল স্টেট সামারি রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গকে বিহার বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটা নিছক ভুল নয় – এটা আমাদের পরিচয় মুছে ফেলার একটা পরিকল্পিত অপচেষ্টা।” তৃণমূলের এই প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট যে, তারা এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ত্রুটি হিসেবে দেখছে না, বরং বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটিকে একটি ‘পরিকল্পিত অপচেষ্টা’ হিসেবেই দেখছে।
ক্ষমা চেয়ে দ্রুত সংশোধনের দাবি
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে অবিলম্বে এই ভুল সংশোধন করতে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, বারবার রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও অবহেলার চিত্রই কি আরও একবার এই ঘটনার মাধ্যমে ফুটে উঠল? এখন সবার নজর নীতি আয়োগের দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর কড়া চিঠির পর এই ভুল নিয়ে তারা কী বক্তব্য রাখে এবং কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বাংলার পরিচয় নিয়ে এই বিতর্ক কোথায় গিয়ে থামে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।